Thursday, March 6, 2025

ওজন কমানোর ওষুধ কি আসলেই নিরাপদ? হৃদ্‌রোগ ও ত্বকের সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ার দাবি গবেষণায়

Share

ওজন কমানোর ওষুধ কি আসলেই নিরাপদ?

ওজন কমানোর জন্য নতুন এক ওষুধের জনপ্রিয়তা দিন দিন আকাশছোঁয়া হচ্ছে। দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় অনেকেই এটি নিয়মিত ব্যবহার করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণা বলছে, এই ওষুধ শরীরের জন্য গুরুতর বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে এটি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং ত্বকের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

এই ওষুধটি মূলত টাইপ-২ ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। জনপ্রিয় ওষুধ ওজ়েম্পিক (Ozempic) সম্পর্কে নতুন গবেষণা বলছে, এটি হৃদ্‌পেশি দুর্বল করতে পারে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং পাশাপাশি ত্বকের নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ওজ়েম্পিক: ওজন কমানোর ম্যাজিক নাকি ভয়ঙ্কর বিপদ?

২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) ওজ়েম্পিক ইঞ্জেকশনকে অনুমোদন দেয়। মূলত, এটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডায়াবিটিস রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ওষুধ খোলা বাজারে ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবে বিক্রি শুরু হয়।

এটি মূলত একটি ইঞ্জেকশন, যা সপ্তাহে একবার নিতে হয়। অনেকেই দাবি করেছেন, এটি দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু ওষুধটির সঠিক মাত্রা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে না জেনেই বহু মানুষ এটি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন, যার ফলে শরীরে ভয়ঙ্কর সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

গবেষণায় কী জানানো হয়েছে?

সম্প্রতি ‘নেচার মেডিসিন’‘জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিয়োলজি (JACC)’-তে প্রকাশিত গবেষণায় ওজ়েম্পিকের কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে।

১. হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়

গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত ওজ়েম্পিক ব্যবহার করলে হৃদ্‌পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ফলে হার্ট ঠিকমতো সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে না, যা কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি নামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এর ফলে—
✅ হৃদ্‌স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে (কার্ডিয়াক অ্যারিদ্‌মিয়া)
✅ হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে
✅ অক্সিজেন সঞ্চালন ব্যাহত হয়ে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে

২. কিডনি ও হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ওজ়েম্পিক ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্যানক্রিয়াটাইটিস (অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ)কিডনি জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে—
❌ দুর্বলতা
❌ ডায়েরিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
❌ অ্যাসিড রিফ্লাক্স

৩. ত্বকের সংক্রমণ ঘটাতে পারে

এই ওষুধের আরেকটি গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ত্বকের সমস্যা। গবেষকরা জানিয়েছেন, ওজ়েম্পিক ব্যবহারের ফলে—
🔸 ত্বকে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে
🔸 চামড়ায় জ্বালা-যন্ত্রণা, র‌্যাশ ও লালচে দাগ হতে পারে
🔸 চামড়া শুষ্ক ও কুঁচকে যেতে পারে

অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই ত্বকের এই সমস্যাগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ ব্যবহার করা একেবারেই নিরাপদ নয়।

বিপদের মুখে পড়ার আগে সতর্ক হন!

ওজন কমানো নিঃসন্দেহে অনেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার জন্য শরীরের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। গবেষকরা বলছেন, ওজন কমানোর জন্য ওষুধের ওপর নির্ভর না করে স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমানোই নিরাপদ উপায়।

👉 চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহার করবেন না
👉 যদি ব্যবহার করেও থাকেন, শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন
👉 ওজন কমানোর জন্য স্বাভাবিক উপায়ে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন

ওজ়েম্পিক ওষুধটি হয়তো কিছুক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে, কিন্তু গবেষণা বলছে, এটি হৃদ্‌রোগ, কিডনি সমস্যা ও ত্বকের সংক্রমণের মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই যেকোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহারের আগে সচেতন হওয়া জরুরি!

মধ্যবিত্তদের জন্য সুখবর! ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে আর কোনও আয়কর নয়

Read more

Local News