Friday, February 7, 2025

এ পারের পাতে পড়ুক, ও পারের পিঠে! রান্না শেখালেন শহরের ক্লাউড কিচেনের কর্ণধার

Share

ও পারের পিঠে! রান্না শেখালেন শহরের ক্লাউড কিচেনের কর্ণধার

শীতকাল এসে গেলেও আবহাওয়ার উষ্ণতা তেমন অনুভূত হচ্ছে না। তবে ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে পৌষ মাস আসছে। পৌষ মানেই পিঠেপুলি, আর সেই পিঠের প্রস্তুতির সময়ও। অনেক অঞ্চলে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, আসাম এবং ত্রিপুরায় বর্ষবরণের দিনে পিঠে খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এই উপলক্ষে, শীতের আমেজে তিন প্রকারের পিঠে রেসিপি ভাগ করে দিয়েছেন শহরের এক ক্লাউড কিচেনের কর্ণধার শ্যামশ্রী চাকী।

১. যশোরের ছিটা পিঠা

এই পিঠে তৈরি করতে মণ্ড তৈরি করার ঝামেলা নেই। আর এর মধ্যে কোনো পুরও দিতে হয় না। যশোরে উৎপত্তি হলেও বর্তমানে গোটা দেশে সকালের জলখাবারে এটি তৈরি হয়।

উপকরণ:

  • ৫০০ গ্রাম আতপ চাল
  • ১ টেবিল চামচ মৌরি
  • ৩ টেবিল চামচ সাদা তেল

প্রণালী:
প্রথমে আতপ চাল সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন মৌরি দিয়ে শিলে বেটে মিশ্রণটি পাতলা করে নিতে হবে। মাটির সরায় তেল মাখিয়ে চাল বাটার মিশ্রণ আঙুলের ডগায় নিয়ে সরার উপর ছিটিয়ে দিতে হবে। দেখতে অনেকটা জালের মতো হবে। এই পিঠের স্বাদ তখনই বাড়ে, যখন এটি নরম থাকে। এরপর, দোসা তোলার মতো জালের একপ্রান্ত থেকে পিঠটি ‘রোল’ করে তুলে নেওয়া যায়। এপারেও নলেন গুড় দিয়ে খাওয়া হয়, কিন্তু ওপারে সবুজ মটরশুঁটির ঘুগনি দিয়ে খাওয়ার চল বেশি।

২. ত্রিপুরার আওয়ান বাঙ্গোই

ত্রিপুরার আদিবাসী সম্প্রদায় এই পিঠটি খায়। বিশেষত, বর্ষবরণের দিনে প্রায় প্রতিটি ঘরে এই পিঠ তৈরি হয়। ‘বাঙ্গোই’ এক ধরনের গাছ, এবং তার পাতায় মোড়া পিঠ তৈরি করা হয়। কিন্তু বাঙ্গোই পাতা পাওয়া না গেলে কলাপাতা ব্যবহার করা যায়।

উপকরণ:

  • ১ কিলো বিন্নি ধানের চাল
  • আধ কাপ আদা কুচি
  • ৪টি বাঙ্গোই পাতা বা কলাপাতা
  • ১ কাপ পেঁয়াজ কুচি
  • ২ টেবিল চামচ লঙ্কা কুচি
  • ১টি পাকা কলা
  • প্রয়োজনমতো নুন

প্রণালী:
প্রথমে চাল আধবাটা করে নিন। এরপর, চালের মিশ্রণে আদা, পেঁয়াজ, লঙ্কা কুচি, নুন এবং পাকা কলা মিশিয়ে ভাল করে মেখে নিন। কলাপাতা পরিষ্কার করে কেটে মিশ্রণটি পাতা দিয়ে ভালোভাবে মুড়ে নিন। তারপর, বড় হাঁড়িতে খড় বেঁধে ঘণ্টাখানেক গরম ভাপে রাখলে তৈরি হয়ে যাবে আওয়ান বাঙ্গোই পিঠে। এটি মাংসের ভর্তা দিয়ে খাওয়ার সময় অদ্ভুত সুন্দর স্বাদ দেয়। রসুন, লঙ্কা, পেঁয়াজ কুচি, ধনেপাতার চাটনি দিয়ে সেদ্ধ মাংসের কিমা মেখে তৈরি করা মাংসের ভর্তা দিয়ে খেতে খুবই সুস্বাদু।

৩. বাংলার বিখ্যাত বর্গি পিঠে

বর্গি পিঠে আসলে ফারসি শব্দ ‘বারগির’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘অশ্বারোহী’। বাংলায় এটি প্রাচীন মরাঠা আক্রমণের সময় প্রবেশ করেছিল, এবং সে সময় থেকেই এটি ‘বর্গি পিঠে’ নামে পরিচিত।

উপকরণ:

  • ২০০ গ্রাম গুড়
  • ২০০ গ্রাম ছোলার ডাল গুঁড়ো
  • ১০০ গ্রাম ময়দা
  • ১৫০ গ্রাম ক্ষীর
  • ১ কাপ নারকোল কোরা
  • ৫০০ গ্রাম ঘি
  • ২০০ গ্রাম চিনি

প্রণালী:
প্রথমে একটি পাত্রে গুড়, ছোলার ডাল, ময়দা এবং ঘি দিয়ে একটি মণ্ড তৈরি করুন। এরপর, সেই মণ্ড থেকে লেচি কেটে ক্ষীরের পুর ভরে দিন। গোল বাটির মতো দেখতে পিঠের ধারগুলো মুড়ে দিয়ে ঘিয়ে ভেজে চিনির ঘন রসে ডুবিয়ে নিন।

শহরের ক্লাউড কিচেনের কর্ণধারের রান্নার শৈলী

শ্যামশ্রী চাকী, যিনি শহরের একটি ক্লাউড কিচেনের কর্ণধার, তাঁর এই বিশেষ পিঠের রেসিপি নতুন বছরের শুরুতে বাঙালির হেঁশেলে নতুন রকমের রন্ধন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে। পুরানো সময়ের এই রেসিপিগুলি এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল, কিন্তু শ্যামশ্রী সেগুলি উদ্ধার করেছেন। তাঁর কিচেনে মজাদার খাবারের স্রষ্টা হয়ে উঠেছেন, এবং তিনি মেনুতে আরও অনেক হারানো খাবারের পদ যুক্ত করার জন্য কাজ করছেন।

Read more

Local News