এসআইআর-এ ১০০% ফর্ম জমা
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার দলের ২৫ হাজার নেতার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন— এসআইআর প্রক্রিয়ায় (বিশেষ নিবিড় সংশোধন) ১০০ শতাংশ এনুমারেশন ফর্ম জমা করতেই হবে।
৯৮% বা ৯৯% নয়, হতে হবে একেবারে ১০০%।
এমনকি এও জানান, আগামী দিনে দলের পদে থাকা-না-থাকার সূচকই হবে– কোন নেতা কত ফর্ম জমা করাতে পেরেছেন।
এই নির্দেশে তৃণমূলের অন্দরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ মনে করছেন এগিয়ে থাকার কৌশল, কেউ আবার দেখছেন রাজনৈতিক চাপ তৈরির পরিকল্পনা। খোঁজ নিয়ে অভিষেকের এই জোরের পাঁচটি প্রধান কারণ খুঁজে পেয়েছে আনন্দবাজার ডট কম।
১. কমিশনকে চাপে রাখা— “টার্গেট ১০০%” স্ট্র্যাটেজি
তৃণমূলের বহু নেতার মতে, অভিষেক রাজনৈতিক কাজকে কর্পোরেট টার্গেট মডেলে করতে পছন্দ করেন।
তাঁরাও জানেন, বাস্তবে ১০০% ফর্ম জমা হওয়া প্রায় অসম্ভব—
- মৃত ভোটার
- স্থানান্তরিত ভোটার
- দুই জায়গায় নাম থাকা
এসব ক্ষেত্রে ফর্ম জমা পড়ে না। তবু ১০০%-এর জোর দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য—
👉 কমিশনের উপর চাপ তৈরি করা।
যত বেশি ফর্ম জমা হবে,
তত বেশি শুনানির সংখ্যা বাড়বে,
এবং তত বেশি কমিশনকে ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন এত মানুষের নাম মিলছে না।
বিজেপি যে “ভুয়ো ভোটার”, “রোহিঙ্গা ভোট”— এই অভিযোগ করছে, ফর্ম জমা বাড়লে সেই অভিযোগকে রাজনৈতিকভাবে ভোঁতা করা যাবে, বলেই মনে করছে তৃণমূল।
২. দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি— অধিক ফর্ম মানে অধিক শুনানির সুযোগ
২৬ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর— এই ৯ দিনে অভিষেক ১৩ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে জেলায় পাঠিয়েছেন। তাঁদের কাজ—
👉 প্রতিটি বিএলএ-র সঙ্গে দেখা করে ১০০% ফর্ম জমার অগ্রগতি দেখা।
কারণ,
যাঁর ফর্ম জমা পড়বে,
তাঁরাই কেবল দ্বিতীয় ধাপে শুনানিতে ডাক পাবেন।
অর্থাৎ—
📌 ফর্ম জমা মানেই মানুষের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের মৌলিক অধিকার বজায় রাখা।
📌 তাই সব তথ্য অসম্পূর্ণ হলেও জমা পড়া চাই— পরে প্রয়োজনীয় নথি দেখা যাবে।
অভিষেকের কৌশল—
“প্রথম পর্বে সংখ্যাবৃদ্ধি করো, দ্বিতীয় পর্বে শক্ত অবস্থান নেব।”
৩. সরকারের ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির মহড়া
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনগাঁর সভায় জানিয়েছেন—
যাঁদের নথি নেই, সরকার পাড়ায় পাড়ায় শিবির করে নথি তৈরি করে দেবে।
সুতরাং,
যত বেশি ফর্ম জমা হবে,
সরকারের প্রস্তুতিও তত বাড়াতে হবে।
তৃণমূলের মতে—
👉 নথিহীন ভোটারকে নথি বানাতে সাহায্য করলে
সেই ভোটার ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে তৃণমূলে ঝুঁকতে পারেন।
এক নেতা বলেন—
“বিজেপি-র সমর্থকের নথিও যদি সরকার করে দেয়, তখন তাঁর মনেও পরিবর্তন আসতে পারে।”
এটাই অভিষেকের রাজনৈতিক বুদ্ধি—
“সাহায্য করো, বিশ্বাস জিতো।”
৪. সাংগঠনিক সক্রিয়তা— নিচুতলার নেতাদের মাঠে নামানোর দাওয়াই
ফর্মকে দলীয় টার্গেট বানানোয়—
👉 বোঝাই কাজ বন্ধ,
👉 মাঠে-ময়দানে ছুটছে নিচুতলার নেতারা।
দলের এক কর্মকর্তা বলেন—
“এসআইআর অনেকটাই জনসংযোগের কাজ। অভিষেকের চাপেই তা এখন দ্বিগুণ গতিতে হচ্ছে।”
অর্থাৎ—
এই ১০০% নির্দেশ আসলে
সংগঠনকে চাঙ্গা রাখার বড় অস্ত্র।
৫. দলের ডাটাবেসে প্রকৃত তথ্য নিশ্চিত করা
ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক ক্ষোভ প্রকাশ করেন—
বুথস্তরের তথ্য যথাসময়ে ডিজিটালে পৌঁছোচ্ছে না।
তাই ১০০% ফর্ম জমার নির্দেশ মানেই—
👉 বুথ থেকে ব্লক
👉 ব্লক থেকে জেলা
👉 জেলা থেকে কেন্দ্রীয় সার্ভারে
তথ্য দ্রুত পৌঁছানোর প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।
এই তথ্য দিয়েই তৃণমূল পরের ধাপে—
- আইনি লড়াই
- কমিশনকে চ্যালেঞ্জ
- রাজনৈতিক যুক্তি—
প্রস্তুত করবে।
শেষ কথা
অভিষেকের ১০০% ফর্ম নির্দেশ
শুধু নির্দেশ নয়—
এটি রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি, সাংগঠনিক চাপ,
এবং কমিশনকে বার্তা—
👉 “এসআইআর-এ তৃণমূলের উপস্থিতি সর্বত্র,
এ কাজ আমাদের জন্য শুধুই ভোট নয়—
এটি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি।”

