এসআইআরে ভোটার তালিকা থেকে উধাও দশ লক্ষ নাম!
রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর চলার মধ্যেই উঠে এল চমকে দেওয়া তথ্য। ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত বুথ–লেভেল রিপোর্ট অনুযায়ী কমপক্ষে ১০ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে চলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছেন মৃত ভোটার—প্রায় ৬.৫ লক্ষ।
এই সংখ্যাটি এখনও প্রাথমিক, কারণ প্রতিদিনই নতুন তথ্য আসছে কমিশনের হাতে। সব এনুমারেশন ফর্ম জমা ও যাচাই শেষ হলে বাদ পড়া নামের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই কমিশন সূত্রে ধারণা।
❖ কী ভাবে মিলল এই তথ্য?
বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও) বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের হাতে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে দেন। পরে যখন সেই ফর্মগুলি সংগ্রহ করা হয়, তখনই প্রকাশ্যে আসে—
- কারা ফর্ম পূরণ করেননি
- কার বাড়ি সময়মতো পাওয়া যায়নি
- কার মৃত্যুর খবর রয়েছে
- কার নাম একাধিক জায়গায় আছে
- কারা স্থানান্তরিত বা নিরুদ্দেশ
এই প্রক্রিয়াতেই উঠে আসে ১০ লক্ষ নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা।
সবচেয়ে বেশি বাদ পড়ার হার উত্তর কলকাতা জেলায়, যেখানে একাধিক ঠিকানায় একই নাম বা মৃত ভোটারের সংখ্যাও বেশি বলে জানা গেছে।
❖ এনুমারেশন ফর্ম: কী অগ্রগতি?
২৪ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত কমিশনের তথ্য অনুযায়ী—
- ৯৯.৭৫% ফর্ম, অর্থাৎ ৭ কোটি ৬৪ লক্ষের বেশি ফর্ম ইতিমধ্যেই বিলি করা হয়েছে।
- পূরণ করা ফর্ম ডিজিটাইজ় হয়েছে ৪ কোটিরও বেশি (৫৯.৪%)
- বাকি কাজ দ্রুতগতিতে চলছে
এই বিপুল কর্মতৎপরতার মাঝেই উঠে আসছে বাদ পড়া নামগুলির হিসাব।
❖ নকল এপিক ও বহুনামধারী ভোটারদের চিহ্নিতকরণ
সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমানে মায়ারানি গোস্বামীর নামে ৪৪টি ভুয়ো ভোটার কার্ড থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে।
কমিশনের মতে—
- এমন সব ভুয়ো বা বহু-স্থানে থাকা নাম খসড়া তালিকা থেকে সরানো হবে।
- বাড়ির ঠিকানা পালটে যাওয়া ব্যক্তিদের যাদের খোঁজ ৩–৪ বারেও পাওয়া যায়নি, তারাও বাদ পড়ছে।
২০২৫ সালের ২৭ অক্টোবরের তালিকা থেকে মোট কত নাম বাদ পড়ল, তা জানা যাবে ৯ ডিসেম্বর, যখন প্রকাশ হবে এ বছরের খসড়া ভোটার তালিকা।
❖ রাজনৈতিক তরঙ্গ: অনুপ্রবেশ তত্ত্বে ফের বিজেপির দাবি
এসআইআর শুরু থেকেই ‘অনুপ্রবেশকারী ভোটার’-বিতর্কে সরব বিজেপি।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন—
“এসআইআর হলে এক কোটি ভোটারের নাম বাদ যাবে—এর মধ্যে মৃত, বহুনামধারী এবং অনুপ্রবেশকারীরা রয়েছেন।”
তবে কমিশন এখনও পর্যন্ত ‘অনুপ্রবেশকারী ভোটার’ প্রসঙ্গে কোনও অফিসিয়াল মন্তব্য করেনি।
❖ কোন জেলার কাজ সবচেয়ে এগিয়ে?
কমিশন জানিয়েছে, এসআইআরের অগ্রগতিতে শীর্ষে এই পাঁচ জেলা—
- পূর্ব বর্ধমান – ৬৬.৪৭%
- আলিপুরদুয়ার – ৬৬.৪১%
- উত্তর দিনাজপুর – ৬৫.৪৩%
- মালদহ – ৬৬.২৩%
- পূর্ব মেদিনীপুর – ৬৫.২৭%
সবচেয়ে ভাল কাজ হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গোসাবায়, যেখানে ১২১ জন বিএলওর ১০০% কাজ সম্পন্ন।
❖ বিএলও-দের মৃত্যু: উদ্বেগ বাড়াল কর্কশ বাস্তবতা
এসআইআরের চাপে রাজ্যে ৩ জন বিএলও কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
সিইও মনোজ আগরওয়াল জানিয়েছেন—
- প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তের কপি চাওয়া হয়েছে
- মৃত্যু যদি দায়িত্ব পালনের সময় ঘটে থাকে, তা কমিশনকে জানানো হবে
- অসুস্থ হলে বিএলও পরিবর্তনের ক্ষমতা ইআরওদের রয়েছে
তিনি আরও বলেন—
“পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও বিএলওর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তারাই এই এসআইআরের ‘হিরো’।”
❖ সামনে কী?
আগামী ৪ ডিসেম্বর ফর্ম জমা নেওয়া শেষ হবে। কমিশনের মতে—
- নতুন ভোটার সংযোজন হবে
- নকল, বহুনামধারী ও মৃত ভোটার বাদ যাবে
- ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হবে খসড়া তালিকা
এসআইআরের ফলাফল তাই রাজ্যের রাজনৈতিক আবহে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

