বাংলায় বাদ পড়ছে অন্তত ১০ লক্ষ ভোটারের নাম — মৃত ৬.৫ লক্ষ
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) চলার মধ্যেই বড়সড় তথ্য সামনে আনল ভারতের নির্বাচন কমিশন। কমিশনের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, রাজ্যে অন্তত ১০ লক্ষ ভোটারের নাম এই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়বে। এখনও পর্যন্ত বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-দের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে এই হিসাব দাঁড়িয়েছে। সব এনুমারেশন ফর্ম জমা হওয়ার পর চূড়ান্ত সংখ্যা আরও বেশি হবে বলেই কমিশনের ধারণা।
মৃত ভোটারই ৬.৫ লক্ষ!
ফর্ম বিলি ও সংগ্রহের সময় বিএলও-রা দেখেছেন বহু নাম আর সক্রিয় নেই। এই ১০ লক্ষের মধ্যে প্রায় ৬.৫ লক্ষ ভোটার ইতিমধ্যেই মৃত।
এ ছাড়া আছেন—
- যাঁরা একাধিক জায়গায় নাম তুলেছেন
- ঠিকানা বদলে অন্যত্র চলে গেছেন
- যাঁদের হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না
ফলে বুথে গিয়ে ফর্ম জমা না পাওয়া, কিংবা বার বার খুঁজেও না পাওয়া—এসব কারণেই বহু নাম বাদ যাচ্ছে।
উত্তর কলকাতায় বাদ পড়ার হার সবচেয়ে বেশি বলে কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে।
১০ ডিসেম্বর প্রকাশ পাবে খসড়া তালিকা
২৪ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ৯৯.৭৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৭ কোটি ৬৪ লক্ষেরও বেশি এনুমারেশন ফর্ম বিলি হয়েছে।
ডিজিটাইজ় হয়েছে ৪ কোটিরও বেশি, অর্থাৎ প্রায় ৫৯.৪% জমা পড়া ফর্ম।
ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৪ ডিসেম্বর। খসড়া তালিকা প্রকাশ হবে ৯ ডিসেম্বর। সেখানেই স্পষ্ট হবে আসল বাদ পড়া নামের মোট সংখ্যা।
এক মহিলার ৪৪টি নকল EPIC!
রবিবার প্রকাশ্যে আসে এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ—
পশ্চিম বর্ধমানের মায়ারানি গোস্বামী নামের এক মহিলার নামে ৪৪টি ভুয়ো ভোটার কার্ড!
কমিশন জানিয়েছে, এ ধরনের নকল বা ডুপ্লিকেট নাম চিহ্নিত করে খসড়া তালিকা থেকেই বাদ দেওয়া হবে।
বিজেপির দাবি: ‘বাদ যাবে এক কোটি নাম’
এসআইআর শুরু হওয়ার পর থেকেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করে আসছেন—
এ প্রক্রিয়ায় অন্তত ১ কোটি ভোটারের নাম বাদ যাবে, এর মধ্যে রয়েছেন—
- মৃত ভোটার
- ডুপ্লিকেট নাম
- এবং তাঁর কথায় ‘অনুপ্রবেশকারী ভোটার’
তবে নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত ‘অনুপ্রবেশকারী ভোটার’ বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
এসআইআরে সবচেয়ে এগিয়ে কোন জেলা?
কমিশনের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কাজের অগ্রগতিতে এগিয়ে রয়েছে পাঁচটি জেলা—
- পূর্ব বর্ধমান — ৬৬.৪৭%
- আলিপুরদুয়ার — ৬৬.৪১%
- উত্তর দিনাজপুর — ৬৫.৪৩%
- মালদহ — ৬৬.২৩%
- পূর্ব মেদিনীপুর — ৬৫.২৭%
সবচেয়ে ভালো কাজ হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গোসাবা এলাকায়—এখানে ১২১ জন বিএলওর মধ্যে ১০০% কাজ ইতিমধ্যেই শেষ।
চাপে বিএলও মৃত্যুর খবর!
এসআইআর-এর কাজ করতে গিয়ে রাজ্যে ৩ জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে।
সিইও মনোজ আগরওয়াল জানিয়েছেন—
- প্রতিটি মৃত্যুর রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তের বিবরণ চাওয়া হয়েছে
- মৃত্যুগুলি ‘কর্তব্যরত অবস্থায়’ হয়েছে কিনা তা কমিশনকে জানানো হবে
- অসুস্থ বা শারীরিকভাবে অক্ষম বিএলওদের অবিলম্বে বদলির নির্দেশ আছে, সিইওর অনুমতির প্রয়োজন নেই
বিএলওরা—‘এসআইআর-এর হিরো’
কাজের চাপ থাকা সত্ত্বেও সিইও মনোজ বিএলওদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন—
“এসআইআরের হিরো হলেন বিএলওরা। তাঁরা অসাধারণ কাজ করছেন।”
সব মিলিয়ে, এসআইআর চলমান থাকতেই আঁচ মিলেছে ব্যাপক নাম বাদ পড়ার।
৪ ডিসেম্বরের পরে পরিসংখ্যান আরও স্পষ্ট হবে।
৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত খসড়া তালিকা রাজ্যের ভোটার চিত্রে নতুন মোড় আনবে বলেই মনে করছে সব মহল।

