বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ গুজরাত!
গুজরাতের অহমদাবাদে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে তিন দিন। এর মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১৭১ বিমানে নিহত যাত্রীদের শনাক্ত করার কাজ জোর কদমে চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৭টি দেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনও বহু পরিবার তাঁদের প্রিয়জনের দেহের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।
১২ জুন অহমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনগামী এই বিমানটি আকাশে উড়তেই সামনের একটি ভবনে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে এবং বিস্ফোরণ হয়। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বিমানটির অধিকাংশ অংশ। বিমানে ছিলেন মোট ২৪২ জন যাত্রী। তাঁদের মধ্যে কেবল একজন বেঁচে ফিরেছেন। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ২৭৪ বলে জানানো হয়েছে, কারণ আশপাশের ভবনের বাসিন্দারাও হতাহত হয়েছেন।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ শনাক্ত, সোমবার শেষকৃত্য
এই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী। তাঁর দেহও এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে স্বাভাবিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যায় তাঁর পরিচয়। গুজরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুষিকেশ পটেল জানিয়েছেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ রূপাণীর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এরপর রাজকোটে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য দেওয়া হবে। তাঁর স্মৃতিতে মঙ্গলবার রাজকোট ও বুধবার গান্ধীনগরে শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার রাজ্যে এক দিনের শোকদিবস ঘোষণা করেছে সরকার।
দেহ শনাক্তে চলছে কঠোর পরীক্ষা
পুড়ে যাওয়া, দলাপাকানো দেহগুলির পরিচয় শনাক্তে ভরসা একমাত্র ফরেন্সিক ডিএনএ পরীক্ষায়। গুজরাতের ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাব (FSL) ও ন্যাশনাল ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (NFSU) যৌথভাবে এই পরীক্ষা চালাচ্ছে। FSL-এর ডিরেক্টর এইচপি সাঙ্ঘভি জানান, “দেহগুলির অধিকাংশই অগ্নিদগ্ধ, তাই সাধারণ উপায়ে শনাক্ত করা একেবারেই সম্ভব নয়।”
এখনও পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ৪৭টি দেহের মধ্যে ২৫টি ইতিমধ্যেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে, আর বাড়ছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ।
দেরিতে এলেও চলছে টানা উদ্ধার অভিযান
দুর্ঘটনার পরপরই দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও পুলিশ একসঙ্গে উদ্ধার কাজে নামে। ধ্বংসস্তূপের নিচে পাওয়া যায় বিমানটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং দেহাবশেষ। ক্রেন দিয়ে তোলা হয় বিমানের পুড়ে যাওয়া অংশ।
শোকস্তব্ধ পরিবার, নিরব প্রশাসনিক তৎপরতা
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রানওয়ে ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটির ভারসাম্য হারিয়ে সামনের একটি দোতলা ভবনে ধাক্কা মারে। মুহূর্তেই বিস্ফোরণ ও আগুন। যাত্রীদের চিৎকারে ভরে ওঠে চারদিক। এই বিপর্যয়ের রেশ এখনও কাটেনি। বহু পরিবার এখনও হাসপাতাল ও মর্গে রাত কাটাচ্ছেন, যদি প্রিয়জনের খোঁজ মেলে।
এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডির পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত প্রশ্নও জোরাল হচ্ছে। প্রশাসন জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসা এবং মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সবরকম সহায়তা করা হবে।

