এক লাখের দোরগোড়ায় সোনার দাম!
মধ্যবিত্তের স্বপ্ন এবার যেন সোনায় মোড়ানো দুর unreachable হয়ে উঠল। এক সময় বিয়ের মরসুমে বা নববর্ষে সোনা কেনা ছিল বাঙালির ঐতিহ্য। কিন্তু সেই ছবি এখন অনেকটাই বদলে গেছে। কারণ, সোনার দাম পৌঁছেছে এক প্রকার আকাশছোঁয়া উচ্চতায়।
এই মুহূর্তে কলকাতায় ২৪ ক্যারাট খাঁটি সোনার ১০ গ্রামের দাম দাঁড়িয়েছে ৯৫,৭০০ টাকা। জিএসটি ধরলে তা গিয়ে ঠেকেছে ৯৮,৫৭১ টাকায়। অর্থাৎ এক লাখ টাকার গণ্ডি ছোঁয়ার আর বাকি সামান্যই।
একই ভাবে, গয়নার সোনার (২২ ক্যারাট) দরও বুধবার পৌঁছে গেল ৯০,৯৫০ টাকাতে। কর-সহ এই দাম দাঁড়িয়েছে ৯৩,৬৭৮.৫০ টাকা।
গয়না ব্যবসায়ীদের দাবি, এই অভাবনীয় মূল্যবৃদ্ধি ভেঙে দিয়েছে পয়লা বৈশাখের বহু বছরের বাজারচলতি ধারাকে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি দোকানগুলির বেচাকেনা কমেছে ৫০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত। ক্রেতারা ভিড় করলেও অধিকাংশই কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার পুরনো গয়না বিক্রি করেই বেরোচ্ছেন।
বনগাঁর সিংহ জুয়েলার্সের মালিক বিনয় সিংহ স্পষ্টই বলেন, “এখন সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া। সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম, সেখানে গয়না কেনার কথা ভাববেন কী করে সাধারণ মানুষ? বিক্রি অর্ধেক হয়ে গেছে।”
সন্ধ্যা জুয়েলার্সের স্বপন মান্না বলছেন, “২২ বছরের ব্যবসায় এমন খারাপ পয়লা বৈশাখ দেখিনি। গত বছর যেখানে ২০০ জন ক্রেতা এসেছিলেন, এ বার এসেছেন মাত্র ৩০ জন।”
এই পরিস্থিতিতে গয়না কেনার বদলে অনেকেই ঝুঁকছেন হালকা ওজনের ডিজাইনার গয়না কিংবা পুরনো গয়না বন্ধক রেখে ঋণের দিকে। স্বর্ণঋণ সংস্থা IIFL-এর আঞ্চলিক কর্তা নিলয় ঘোষ জানাচ্ছেন, “সোনা বন্ধক দিয়ে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০%। মানুষ টাকা তুলতে বাধ্য হচ্ছেন।”
অন্যদিকে, জেজে গোল্ডের ডিরেক্টর হর্ষদ আজমেরা বলছেন, “নতুন সোনা কেনার চেয়ে এখন পুরনো সোনা বিক্রিই অনেক বেশি হচ্ছে।”
পশ্চিমবঙ্গ বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে (১৫ এপ্রিল ২০২৪) ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল ৭৩,৫০০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে দাম বেড়েছে ২২,০০০ টাকারও বেশি। গত এক মাসেই বাড়তি বেড়েছে ৭৩৫০ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়া, ডলার-রুপি বিনিময় হারের পরিবর্তন এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্যই এই মূল্যবৃদ্ধি।
শেষ কথা: এক সময় সোনা ছিল ভবিষ্যতের সুরক্ষা। এখন তা মধ্যবিত্তের জন্য হয়ে উঠছে এক অলীক স্বপ্ন। সোনা যেন ধীরে ধীরে শুধুই ধনীদের গয়না বাক্সে বন্দি হয়ে যাচ্ছে।
মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ