আমেরিকা কি তৈরি করছে অদৃশ্য অস্ত্র?
বিশ্বের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা সৃষ্টির সন্ধানে একধাপ এগিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি, আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশগুলোতে একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, যার শক্তি এতটাই বিপজ্জনক যে এটি একক ‘ঘুষি’তে একটি গ্রহকেও ধ্বংস করতে সক্ষম হতে পারে! একে বলা হচ্ছে লেজার সুপার ওয়েপন বা ‘ডেথ স্টার’-এর মতো এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র, যার প্রয়োগ হতে পারে মহাশূন্য যুদ্ধের মধ্যে।
লেজার অস্ত্র: এক অদৃশ্য শক্তি
যদিও লেজারের অস্ত্র নির্মাণের ধারণা অনেক পুরনো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। লেজার অস্ত্রকে বলা হয় অদৃশ্য শক্তি, যেহেতু এর আলো খুবই সূক্ষ্ম এবং প্রচণ্ড শক্তিশালী। এর প্রভাব এতটাই মারাত্মক হতে পারে যে, এটি পুরো একটি গ্রহকে ধ্বংস করতে সক্ষম। এমন দাবিই তুলেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
২০১৩ সালে, ওয়াশিংটনের সাদা বাড়িতে (হোয়াইট হাউস) এক আবেদনপত্র জমা পড়েছিল, যেখানে ৩৪,০০০ আমেরিকান নাগরিক অনুরোধ করেছিলেন, তারা চান এই ধরণের অদৃশ্য অস্ত্র তৈরি হোক। এই আবেদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়, এবং আমেরিকার প্রশাসনকে যথেষ্ট চাপে ফেলে। তবে মার্কিন সরকার এ বিষয়ে কোনও ঘোষণাই দেয়নি, বরং বলেছে, এমন একটি অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে না।
আমেরিকার প্রস্তাবিত ‘ডেথ স্টার’ অস্ত্র
প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, এই লেজার অস্ত্র এতটাই শক্তিশালী হতে পারে যে, তার মাধ্যমে একটি গ্রহকে ধ্বংস করা সম্ভব। ২০১৬ সালের মধ্যে এমন অস্ত্র নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সামনে দাবি ওঠে। যদিও আমেরিকার তৎকালীন প্রশাসন, বিশেষত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এরকম একটি অস্ত্র তৈরি করার কোনও পরিকল্পনা নেই।
ওবামা প্রশাসন মনে করেছিল, মহাকাশে যুদ্ধ করা এবং মহাশূন্যে এই ধরনের অস্ত্র প্রয়োগের কোনও যৌক্তিকতা নেই। পেন্টাগন জানিয়েছে, এমন একটি অস্ত্র তৈরির খরচ আনুমানিক সাড়ে আট লক্ষ কোটি ডলার, যা বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারে অসম্ভব।
লেজার অস্ত্রের বৈশিষ্ট্য এবং চ্যালেঞ্জ
লেজার অস্ত্রের প্রথম উল্লেখ মূলত কল্পবিজ্ঞানে পাওয়া যায়। ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা এর প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন, কিন্তু তারা যে সফলতা পেয়েছেন, এমনটা বলা যায় না। পরবর্তীকালে, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া এই অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে আরও গভীরভাবে কাজ করতে শুরু করে।
লেজারের শক্তি পরীক্ষা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা হিরে ব্যবহার করেছেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, একাধিক লেজার রশ্মি একত্রিত হয়ে এক বিশাল শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। লেজার শক্তির অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে, রশ্মি মাঝে মাঝে ক্রমশ শক্তি হারিয়ে ফেলে, ফলে সঠিক লক্ষ্যে আঘাত হানতে সমস্যা হয়।
মহাশূন্যের আবর্জনা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় লেজারের ভূমিকা
লেজারের এই শক্তি ভবিষ্যতে মহাশূন্যের আবর্জনা সরানোর জন্যও কাজে লাগানো হতে পারে। গবেষকদের মতে, ছোট আকারের উল্কাপিণ্ডের ওপরও সফলভাবে লেজার প্রয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু একটি পুরো গ্রহকে ধ্বংস করার ক্ষমতা কী বাস্তবে সম্ভব, তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে।
২০২৪ সালের মার্চে, লেজারের শক্তি এবং তার সামরিক প্রয়োগ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশিত হয়। বর্তমানে, আমেরিকা, রাশিয়া এবং ফ্রান্স লেজার অস্ত্র তৈরির দিকে নজর দিচ্ছে।
ভারতের অবস্থান
এদিকে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-ও লেজার অস্ত্রের উন্নতির দিকে কাজ করছে, তবে এই বিষয়টি এখনও গোপন রাখা হয়েছে। এর আগে, ভারতীয় সেনাবাহিনীও বিভিন্ন রকমের শক্তির অস্ত্র তৈরির বিষয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে, তবে এই লেজার অস্ত্রটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে কোনও চূড়ান্ত ঘোষণা এখনও করা হয়নি।
উপসংহার
যদিও লেজার অস্ত্রের শক্তি এবং তার সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও বিকশিত হলে, তা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, এটি যে মহাশূন্যে যুদ্ধের চেহারা বদলে দিতে পারে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
প্রাণভিক্ষা পাবেন নিমিশা? ‘ব্লাড মানি’ কি বাঁচাতে পারবে ইয়েমেনে আটক ভারতীয় তরুণীকে?