Sunday, November 30, 2025

এইচ-১বি ভিসায় ট্রাম্পের নতুন ‘ইউ-টার্ন’: দক্ষ কর্মীর অভাব স্বীকারে মার্কিন রাজনীতিতে ঝড়, আশায় ভারত

Share

এইচ-১বি ভিসায় ট্রাম্পের নতুন ‘ইউ-টার্ন’!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও এইচ-১বি ভিসা নিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত সুরে কথা বললেন। অভিবাসনবিরোধী অবস্থান নিয়ে বহুদিন ধরেই বিতর্কে থাকা ট্রাম্প এবার স্বীকার করে নিলেন— আমেরিকায় পর্যাপ্ত প্রতিভাবান ও দক্ষ কর্মী নেই। তাঁর বক্তব্যে শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিেই আলোড়ন পড়েনি, আন্তর্জাতিক বাজারেও তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ। ভারতীয় আইটি শিল্প এই মন্তব্যে স্বস্তির শ্বাস ফেললেও রিপাবলিকান শিবিরে নেমেছে সমালোচনার ঝড়।

দক্ষ কর্মীর অভাব! ট্রাম্পের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি

‘ফক্স নিউজ়’-এর সঞ্চালিকা লরা ইনগ্রাহামের প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প বলেন—
“আমাদের দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। আপাতত বিদেশ থেকে প্রতিভা আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই।”

এই মন্তব্যের পরই মার্কিন রাজনীতিতে ব্যঙ্গ, ট্রোলিং, ক্ষোভ— সবই শুরু হয়েছে। বিশেষত রিপাবলিকান ভোটব্যাঙ্কে ধস নামার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে দাবি করেছেন— বিদেশিরা স্থানীয়দের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। এখন তাঁরই মুখে দক্ষ জনশক্তির অভাব, তা নিয়ে চূড়ান্ত বিব্রত হয়ে পড়েছে তাঁর দল।

জর্জিয়ার উদাহরণ টেনে ট্রাম্পের যুক্তি

জর্জিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ের পর দক্ষিণ কোরিয়ার বহু দক্ষ কর্মীকে দেশছাড়া করা হয়। তাঁদের অনেকেই ব্যাটারি তৈরির মতো জটিল কাজে যুক্ত ছিলেন। ট্রাম্প বলেন—
“ওরা চলে যাওয়ায় জর্জিয়া ভুগছে দক্ষ কর্মীর অভাবে। এসব কাজ আমাদের শেখা প্রয়োজন।”

এই বক্তব্যে আরও প্রমাণিত হয়েছে যে, দক্ষ বিদেশি কর্মীদের অভাবে আমেরিকার বেশ কিছু শিল্প ক্ষেত্র কার্যত বিপদে।

ট্রাম্পের অতীত অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা

গত নির্বাচনে অভিবাসন ছিল ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান ইস্যু। তিনি বলেছিলেন—

  • বিদেশিরা স্থানীয় আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে
  • এইচ-১বি ভিসার শর্ত কঠোর করা হবে
  • বিদেশি কর্মীদের প্রবেশ কমাতে হবে

এমনকি একসময় তিনি এই ভিসা বাতিল করার কথাও বলেছিলেন। পরবর্তীতে শর্ত আরও কঠোর করে এইচ-১বি ভিসার খরচ বাড়িয়ে দেন। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারতীয়দের মতো দক্ষ বিদেশি কর্মীরা।

নতুন নিয়মে বিদেশিদের সুযোগ বাড়লেও কমবে নবাগতদের সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী—

  • বেতনকাঠামোর ভিত্তিতে এইচ-১বি ভিসাধারী নির্বাচন হবে
  • সর্বোচ্চ স্তরের বেতনে থাকা কর্মীরা চারবার সুযোগ পাবেন
  • নবাগত ও মাঝারি বেতনের কর্মীদের সুযোগ কমে যাবে

এতে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে— অভিজ্ঞ, উচ্চবেতনের কর্মীকে আমেরিকা বেশি অগ্রাধিকার দিতে চাইছে। ভারতের মতো প্রযুক্তি দক্ষ দেশের জন্য এটি বড় খবর।

বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা: চিন ও কানাডার ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ চাপ বাড়াল ট্রাম্পের উপর

চিন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে নতুন K-ভিসা, যার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতিভাদের দেশে আনতে মরিয়া তারা। কানাডা ও ব্রিটেনও একই পথে হেঁটে প্রতিভাবান বিদেশিদের আকর্ষণ করতে বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করেছে।

ফলে আমেরিকা বুঝতে বাধ্য হয়েছে—
যদি কঠোরতা বজায় থাকে, বিশ্বসেরা দক্ষ কর্মীরা অন্য দেশে চলে যাবে।

রিপাবলিকান শিবিরে ক্ষোভ, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ভাটা

এমন মন্তব্যের পর ফ্লোরিডার রিপাবলিকান নেতা অ্যান্টনি সাবাতিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“এভাবে চললে ট্রাম্পের জন্য আমরা নির্বাচনে হারব।”

মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোও ট্রাম্পকে তীব্র কটাক্ষ করছে— কেউ বলছে তিনি ‘নীতি বদলের ওস্তাদ’, কেউ বলছে ‘ট্রাম্প আমেরিকানদেরই অপমান করলেন’।

ভারতের কি লাভ?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন—

  • ভারতের আইটি শিল্পে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়বে
  • এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ভারত আমেরিকার সঙ্গে আরও সুবিধাজনক অবস্থানে আলোচনা করতে পারবে
  • ট্রাম্প বাণিজ্যচুক্তিও দ্রুত করতে চাইবেন

সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের এই ডিগবাজিতে আপাতত সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পেয়েছে ভারত।

Read more

Local News