এইচএমপিভি কোনও নতুন ভাইরাস নয়
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়ে দেশজুড়ে ছড়ানো উদ্বেগ কমাতে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নড্ডা। এক ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, এইচএমপিভি নতুন কোনও ভাইরাস নয়। এটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ২০০১ সালে এবং বহু বছর ধরে এটি বিশ্বজুড়ে বিরাজ করছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এও আশ্বস্ত করেন যে, ভারতের কোনও অঞ্চলে শ্বাসযন্ত্রজনিত ভাইরাল সংক্রমণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা যায়নি।
চিনের পরিস্থিতি ও ভারতের সতর্কতা
সম্প্রতি চিনে এইচএমপিভির একটি রূপ ছড়িয়ে পড়েছে, যা সেখানকার জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব ভারতের মতো দেশেও আলোচিত হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, চিনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের রূপটি ভারতের সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
চিনের সংক্রমণকে শীতকালীন প্রাদুর্ভাব হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থা। একইসঙ্গে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও চিনের পরিস্থিতির উপর নিবিড় নজরদারি চালাচ্ছে। পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশগুলির সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করছে।
ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি
ভারতে এইচএমপিভি সংক্রমণের ঘটনা খুবই কম। সম্প্রতি পাঁচ শিশুর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজনের বয়স সাত এবং অন্যজনের ১৩ বছর। মহারাষ্ট্রের নাগপুরে কাশি ও জ্বরে ভোগার পরে তাদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। এর আগে কর্নাটক, গুজরাত, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গেও সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
শীতকালীন সংক্রমণ ও এইচএমপিভি
এইচএমপিভি প্রধানত শীতকাল এবং বসন্তের শুরুর দিকে সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতা রাখে। মন্ত্রী নড্ডা জানান, যে কোনও বয়সের মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে শিশু এবং প্রবীণদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। ভাইরাসটি সাধারণত সর্দি, কাশি, জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। তারা শীঘ্রই এইচএমপিভি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ভারতের কাছে পাঠাবে বলে জানিয়েছে।
সরকারের পদক্ষেপ
কেন্দ্রীয় সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছে যে, এইচএমপিভি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভারতে এই ভাইরাসের বিস্তারের কোনও অস্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তা চালু থাকবে।
সতর্কতার পরামর্শ
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। নিয়মিত হাত ধোয়া, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কার্যকরী। শ্বাসযন্ত্রের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
দেশবাসীকে মন্ত্রীর বার্তা
এইচএমপিভি নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ভারত সরকার সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন এবং প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’’
সাধারণ মানুষকে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে দায়িত্বশীল আচরণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘চিনের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা নজরদারি চালাচ্ছি। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।’’
উপসংহার
শীতকালীন সংক্রমণ হিসেবে পরিচিত এইচএমপিভি নতুন কোনও ভাইরাস নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতা এবং জনগণের সচেতনতা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
কর্নাটকের পরে গুজরাতে এইচএমপিভির হানা! শিশুদের যত্নে বিশেষ পরামর্শ চিকিৎসকদের