এআই প্রযুক্তিতে কণ্ঠ ‘চুরি’!
ভারতীয় সঙ্গীতজগতের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোঁসলে আবারও প্রমাণ করলেন—নিজের সৃষ্টিকে রক্ষা করতে বয়স কোনও বাধা নয়। ৯১ বছর বয়সেও তিনি লড়ছেন নিজের কণ্ঠস্বর ও সত্ত্বার অধিকার রক্ষার জন্য। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির অপব্যবহারে তাঁর কণ্ঠস্বর নকল করে ব্যবহার করা হচ্ছিল বিনা অনুমতিতে, এমনকি তা বিক্রি করে অর্থ উপার্জনও করছিল কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন। এই অন্যায়ের প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।
সম্প্রতি বম্বে হাই কোর্ট আশা ভোঁসলের পক্ষে রায় দিয়েছে, যা তাঁকে অনেকটাই সুরক্ষিত করেছে। বিচারপতি আরিফ এস. ডক্টর পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট করে জানান, কোনও খ্যাতনামা ব্যক্তির নাম, কণ্ঠস্বর, ছবি, ব্যঙ্গচিত্র বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি তাঁর অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা আইনত অপরাধ। এমন কাজ করা মানেই সেই ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আশা ভোঁসলের অভিযোগ ছিল গুরুতর। তাঁর কণ্ঠস্বরকে এআই-এর মাধ্যমে বিকৃত করে গান তৈরি করা হচ্ছিল, যা আসল কণ্ঠের মতো শোনালেও আসলে ছিল সম্পূর্ণ নকল। শুধু তাই নয়, সেই নকল কণ্ঠ ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনও করছিল কিছু সংস্থা। এতে তাঁর শিল্পীসত্ত্বার অবমাননা যেমন হচ্ছিল, তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল তাঁর আর্থিক অধিকারও।
এই ঘটনা শুধু আশা ভোঁসলের নয়, বিশ্বজুড়ে বহু শিল্পী ও অভিনেতার জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি বলিউড ও সঙ্গীতজগতের একাধিক তারকাও এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন এবং আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নিজেদের সত্ত্বা রক্ষার জন্য। আশা ভোঁসলের মামলায় আদালতের রায় তাঁদের পক্ষেও দিশা দেখাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আশা ভোঁসলে শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর গান মন জয় করেছে কোটি কোটি শ্রোতার। তাঁর কণ্ঠস্বর নিজেই এক ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য যদি কোনও প্রযুক্তির মাধ্যমে চুরি হয়ে যায়, তাহলে তা কেবল এক জন শিল্পীর নয়, গোটা সংস্কৃতির জন্যই বিপজ্জনক—এমনটাই মনে করছেন সঙ্গীতজগতের অনেকেই।
আদালতের এই রায়ের পরে আপাতত অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছেন আশা। তবে তিনি জানেন, প্রযুক্তির যুগে এই লড়াই এখানেই শেষ নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা যেমন অস্বীকার করা যায় না, তার অপব্যবহারও যে ভয়াবহ হতে পারে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ এই ঘটনা।
শিল্পীর কণ্ঠ, ছবি বা পরিচয় শুধুই বিনোদনের উপকরণ নয়—সেগুলি তাঁর পরিশ্রম, প্রতিভা এবং সৃষ্টিশীলতার ফল। তাই সেগুলিকে সুরক্ষিত রাখা শুধু আইনি দায়িত্ব নয়, নৈতিক দায়িত্বও। আশা ভোঁসলের এই সাহসী পদক্ষেপ সেই দায়িত্বেরই দৃষ্টান্ত।
বয়স ৯১ পেরিয়েও নিজের সত্ত্বা রক্ষার জন্য তিনি যে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা শুধু তরুণ শিল্পীদের অনুপ্রেরণা নয়, প্রযুক্তির যুগে সৃষ্টিশীল মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের এক নতুন অধ্যায়ও।
কষা মাংসের রান্নায় পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চোখে জল? জানুন ৫ কার্যকরী টোটকা

