এআই–এর বিভ্রমে মন্দিরে ‘সাপের আরতি’!
সাম্প্রতিক সময়ে সমাজমাধ্যমে কৃত্রিম মেধা বা এআই–নির্মিত ভিডিও নিয়ে হৈচৈ নতুন কিছু নয়। কখনও অবিশ্বাস্য দৃশ্য, কখনও অতিপ্রাকৃত পরিস্থিতি—সব মিলিয়ে এআই যেন বাস্তবতার সীমানাকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ঠিক তেমনই একটি ভিডিও গত কয়েক দিনে তুমুল ভাইরাল হয়েছে, যা দেখে প্রথমেই হতবাক হয়েছেন নেটাগরিকেরা। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি শিবমন্দিরের গর্ভগৃহে পুণ্যার্থীদের ভিড়। মূর্তির সামনে নৈবেদ্য ও আরতির থালা সাজানো। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়—পুরোহিত বা কোনও মানুষের বদলে আরতি করছে একটি বিশালাকায় সাপ!
ভিডিওতে দেখা যায়, সাপটি মুখে আরতির থালা ধরে মন্দিরের দেবমূর্তির সামনে তা ঘুরিয়ে আরতির মতোই নাচন করছে। পুণ্যার্থীরা বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে সেই দৃশ্য দেখছেন। কেউ কেউ মোবাইলে তা ধারণ করছেন। মুহূর্তের মধ্যে ভিডিওটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং নানা প্রতিক্রিয়ার ঢেউ ওঠে—কেউ চমকে যান, কেউ আবার ভিডিওটিকে ‘দেবকৃপা’ বলে দাবি করেন।
কিন্তু খুব দ্রুতই শুরু হয় সত্যতা যাচাই। বহু প্রযুক্তিবিদ, কনটেন্ট–বিশ্লেষক এবং ডিজিটাল ফ্যাক্ট–চেকিং সংস্থা জানায়, ভিডিওটি মোটেই বাস্তব নয়। এটি সম্পূর্ণরূপে কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করে বানানো। সাপের চলন, থালা ধরার ভঙ্গি, আরতির আগুনের আলো—সবই এআই–এর সাহায্যে সৃষ্টি। অর্থাৎ মন্দিরে সরীসৃপের আরতি করার কোনও ঘটনাই বাস্তবে ঘটেনি।
ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘ওপিহেড’ নামের এক রেডিট অ্যাকাউন্ট থেকে। সেখানে পোস্ট হওয়ার পর মুহূর্তেই লাখো মানুষ তা দেখেন, লাইক ও কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। অনেকেই বিস্মিত হয়ে ভাবতে থাকেন, সত্যিই কি এমন ঘটতে পারে? কিন্তু ভুয়ো প্রমাণ স্পষ্ট হওয়ার পরই শুরু হয় সমালোচনা।
নেটাগরিকদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলা করা অত্যন্ত অনুচিত। কেউ লিখেছেন—“এই ধরনের ভিডিও মানুষকে ভুল পথে চালিত করতে পারে।” আর এক জনের মন্তব্য—“এআই–এর অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে বড় বিপদ ডেকে আনবে।” ভিডিও নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠতেই বহু বিশেষজ্ঞও মত দেন, এমন ভিডিও মানুষকে সহজেই বিভ্রান্ত করতে পারে, যার সামাজিক প্রভাব বিপজ্জনক হতে পারে।
ধর্মীয় স্থান, বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে সামনে রেখে ভুয়ো ভিডিও বানানো—এসবকে অনেকেই সমাজ–বিভাজনের অস্ত্র হিসেবে দেখছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম মেধার উন্নতি যত হচ্ছে, ততই বাড়ছে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি। তাই ভিডিও দেখেই বিশ্বাস না করে বরং সত্যতা যাচাই করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
এই ভিডিও–কাণ্ডের পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে—এআই–নির্মিত কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে কঠোর নিয়ম তৈরি করা কি জরুরি? কারণ প্রযুক্তির এই বিশাল শক্তি ভালো কাজে যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনই এর অপব্যবহারে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সাপের মুখে থালা নিয়ে শিবের আরতি—শুনতে যতটা অবাক করা, বাস্তবে ততটাই অবাস্তব। আর এআই সেই অবাস্তবতাকেই সত্যির মুখোশ পরিয়ে সামনে এনে দিয়েছে। তাই ডিজিটাল যুগে চোখের সামনে দেখা সবকিছুকেই সত্য ধরে নেওয়া যাবে না—এই ভিডিও সেই সতর্কবার্তাই আবারও স্মরণ করিয়ে দিল।

