ঋণের ফাঁদে নিঃস্ব!
ঋণ শুধুমাত্র অর্থের নয়, কখনও কখনও তা মানুষের শরীরের অঙ্গ পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে! ঠিক এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে। মাত্র ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন এক যুবক, কিন্তু শোধ দিতে না পারায় পাওনাদার তাঁকে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করেন! কিডনি বিক্রির পরেও ঋণ থেকে মুক্তি পাননি তিনি—বরং পাওনাদার এক ধাক্কায় ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন!
এ ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এক কুখ্যাত সুদখোর ও এক কিডনি পাচারকারী নারী।
💰 ৬০ হাজার টাকার জন্য কিডনি বিক্রি!
অশোকনগর থানার হরিপুর এলাকার বাসিন্দা বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতল পেশায় সুদখোর। স্থানীয় এক যুবক সংসার চালানোর জন্য তাঁর কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু সুদের বোঝা এতটাই বেড়ে যায় যে, তিনি আসল পরিশোধ করতেও অক্ষম হয়ে পড়েন।
যুবকের অভিযোগ, তিনি ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা সুদ দিয়েছেন, তবুও পাওনাদার ক্রমাগত চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন। একসঙ্গে এত টাকা কীভাবে জোগাড় করবেন, তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। তখনই বিকাশ ঘোষ তাঁকে এক ভয়ংকর ‘সমাধান’ দেন—কিডনি বিক্রি করুন!
শুধু পরামর্শই নয়, পাওনাদার নিজেই কিডনি বিক্রির লোক খুঁজে দেন! এমনকি, কিডনি ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন এক মহিলার মাধ্যমে, যিনি কিডনি পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
🏥 অস্ত্রোপচারের পরও মুক্তি নেই!
অসহায় যুবক ও তাঁর স্ত্রী উপায় না দেখে পাওনাদারের পরামর্শ মতোই স্ত্রীর একটি কিডনি বিক্রি করতে রাজি হন। কলকাতার এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কিডনি হস্তান্তর করা হয়।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়!
কিডনি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরই পাওনাদার নতুন শর্ত চাপিয়ে দেন—
🔴 আসল ৬০ হাজার তো দিতেই হবে, তার ওপর আরও ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে!
🔴 মোট ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন তিনি!
একদিকে স্ত্রীর কিডনি বিক্রি হয়ে গেছে, অন্যদিকে পাওনাদারের নতুন দাবিতে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন যুবক। বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।
🚔 পুলিশের জালে সুদখোর ও পাচারকারী নারী
যুবকের অভিযোগের ভিত্তিতে অশোকনগর থানার পুলিশ অভিযুক্ত শীতলকে গ্রেফতার করেছে। কিডনি পাচারে সহায়তাকারী মহিলাকেও আটক করা হয়েছে।
পুলিশের অনুমান, এই নারী শুধুমাত্র মধ্যস্থতাকারী নন, বরং কিডনি পাচারচক্রের সক্রিয় সদস্য। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও বড় চক্রের হদিস পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
ধৃতদের শীঘ্রই আদালতে হাজির করানো হবে এবং পুলিশ হেফাজতে নিয়ে তদন্তের পরিধি আরও বিস্তৃত করা হবে।
⚠️ কেন এমন ভয়ংকর পরিণতি?
এই ঘটনা আমাদের সমাজের এক কঠোর বাস্তবতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—
✅ ঋণের ফাঁদে পড়ে মানুষ কখনও কখনও নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করতেও বাধ্য হয়!
✅ কিডনি পাচারচক্র এখন এতটাই সক্রিয় যে, অসহায় মানুষদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে তারা ভয়ঙ্কর লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে।
✅ সুদখোরদের দৌরাত্ম্য এখনও বহু জায়গায় নির্বিঘ্নে চলছে।
এখন প্রশ্ন একটাই—এই ঘটনা কি শুধুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি আরও অনেকের জীবন নীরবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই পাচারচক্রের হাতে? প্রশাসন কি সত্যিই এই পাচারচক্রের শেকড় উপড়ে ফেলতে পারবে? 🛑
শেষমেশ ব্রিটেনযাত্রায় মমতা! হিথরোর বিপর্যয় কাটিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় রওনা