উন্মাদনা ফুরিয়েছে অযোধ্যার বিমানবন্দরে
অযোধ্যার মহর্ষি বাল্মীকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। যেখানে কিছু মাস আগেও রামমন্দির উদ্বোধনের কারণে এখানে ছিল উৎসবের মতো পরিবেশ, সেখানে এখন টার্মিনালের অধিকাংশ অংশ ফাঁকা পড়ে থাকছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, রামমন্দির উদ্বোধনের পরপরই যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা ন’মাসের মধ্যেই কমে গিয়েছে। এখনও মন্দির পুরোপুরি তৈরি হয়নি, যা কিছুটা হলেও এই যাত্রীসংখ্যা হ্রাসের একটি কারণ।
গত বছর ১৪৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগে নির্মিত অযোধ্যার এই বিমানবন্দরটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেছিলেন। রামমন্দির উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারা, ইন্ডিগো, আকাশ এয়ারের মতো বেশ কিছু বিমান সংস্থা অযোধ্যা ও দেশের বিভিন্ন শহরের মধ্যে ফ্লাইট চালু করেছিল। দিনে প্রায় ২২টি বিমান ওঠানামা করত। সেইসময় ঘোষণা করা হয়েছিল যে, শীঘ্রই এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও চালু হবে। কিন্তু এক বছরের মাথাতেই দেখা যাচ্ছে দিনে গড়ে মাত্র ১০-১২টি বিমান ওঠানামা করছে। বেশ কিছু বিমান সংস্থা সরাসরি ফ্লাইটও বন্ধ করে দিয়েছে। স্পাইসজেট ইতিমধ্যেই অযোধ্যায় তাদের সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।
পর্যটকেরা কেন বিমানে আসছেন না?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অযোধ্যায় পর্যাপ্ত ভাল মানের হোটেল এবং অন্যান্য পর্যটন সুবিধা না থাকার কারণেই ধনী পর্যটকরা বিমানযাত্রার বদলে লখনউ বা কাছাকাছি শহর থেকেই গাড়িতে যাতায়াত করছেন। এ ছাড়াও, অযোধ্যার অনেক পর্যটক এবং তীর্থযাত্রী সাধারণত কম খরচে ভ্রমণ করতে চান। ফলে তাঁদের বেশিরভাগই বাস বা ট্রেনে আসেন, বিমানকে এড়িয়ে চলেন। পর্যটন শিল্পমহল মনে করছে, এই কারণেই অযোধ্যার বিমান টার্মিনাল এখন প্রায় শূন্য।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের দাবি অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে অযোধ্যায় প্রায় ১১ কোটি মানুষ এসেছিলেন। কিন্তু এখানকার টার্মিনালে সেই তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা নগণ্য। তাদের মতে, অধিকাংশ তীর্থযাত্রী সাধারণত কম খরচের ভ্রমণ মাধ্যম বেছে নেন, ফলে বিমানযাত্রার চাহিদা কম থাকে।
আশার আলো: শীতকালে ফের জমবে ভিড়?
উত্তরপ্রদেশ সরকারের পর্যটন দফতরের মতে, শীতকালে হয়তো পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। দীপোৎসব এবং রামমন্দিরের নির্মাণকাজ এগিয়ে যাওয়ার কারণে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। এ ছাড়া, আগামী বছরের গোড়ায় প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিতব্য মহাকুম্ভের ফলে অনেক ভক্ত ও তীর্থযাত্রী অযোধ্যায় রামমন্দির দর্শনে আসতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।
অযোধ্যার জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই এই পর্যটকদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবস্থাপনা—সব জায়গায় সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। তবে মহাকুম্ভ উপলক্ষ্যে যে তীর্থযাত্রীরা আসবেন, তাঁদের মধ্যে কতজন বিমানে অযোধ্যায় পৌঁছাবেন, তা এখনও বলা কঠিন।
বর্তমানে অযোধ্যার বিমানবন্দরের স্থবির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায়, শুধুমাত্র রামমন্দির বা অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা দেখাতে ইচ্ছুক তীর্থযাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলতে হবে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হলে অযোধ্যার বিমানবন্দরের ব্যস্ততাও ধীরে ধীরে বাড়বে।