ঈশানের প্রত্যাবর্তনের গল্প!
রবিবার রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ঈশান কিশানের ৪৫ বলের শতরান দেখে মুগ্ধ ক্রিকেটপ্রেমীরা। অনেকে বলছেন, নির্বাচকদের দরজায় ফের কড়া নাড়ছেন তিনি। তবে এই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের পেছনে রয়েছে অগণিত লড়াই, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসের গল্প। নিজের তৈরি অ্যাকাডেমিতে ঘাম ঝরানো, মানসিক শক্তি অর্জন আর একটি অনুপ্রেরণামূলক ফোন কলই বদলে দিয়েছে ঈশানের জীবন।
কঠিন সময়ের মুখোমুখি ঈশান
গত বছর ঈশানের জন্য ছিল এক কঠিন অধ্যায়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। বোর্ডের মতে, ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে অনীহা দেখিয়েছিলেন ঈশান। উইকেটরক্ষক হিসেবে দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারদের তালিকা থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। সেই সময় ঈশানকে ‘অবাধ্য’ তকমা দিয়ে শিক্ষা দিতে চেয়েছিল বোর্ড।
কিন্তু ঈশান শিখেছিলেন অন্যভাবে। নিজের অর্জিত অর্থ দিয়ে পাটনায় গড়ে তোলেন নিজের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। যেখানে তিনি প্রতিদিন নিজের দক্ষতা ঝালিয়ে নিতে ব্যস্ত থাকতেন। মুম্বইয়ের মাঠ ঘণসোলীতে অনুশীলনের বদলে এবার নিজের মাটিতেই ঘাম ঝরিয়েছেন।
অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমের গল্প
একটি সূত্র জানিয়েছে, ঈশান প্রতিদিন দুই ভাগে অনুশীলন করতেন। সকালবেলা ক্রিকেটীয় দক্ষতার উন্নতিতে ২-৩ ঘণ্টা সময় দিতেন এবং বিকেলে জিম সেশন অথবা গতি বাড়ানোর অনুশীলন করতেন। পাশাপাশি টেকনিক্যাল সমস্যাগুলোর সমাধান করতে বিশেষজ্ঞদের সাথে ভিডিয়ো বিশ্লেষণ করতেন। এই দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রমই তাঁকে মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
পরিবারের সঙ্গেও দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন ঈশান। ভারতীয় দলে খেলার সময় যেখানে পরিবারকে সময় দিতেন, সেখানে এবার পুরোপুরি ক্রিকেটকেই সময় দিয়েছেন। পারিবারিক পরিবেশে নিজের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন চালিয়ে গেছেন নিরলসভাবে।
বদলে দেওয়া এক ফোন কল
এই কঠিন সময়ে ঈশানকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল একটি বিশেষ ফোন কল। নিলামের পর তিনি সরাসরি হায়দরাবাদ দলের সতীর্থ অভিষেক শর্মাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তোমরা আমার থেকে কী চাও? মাঠে নেমে প্রতিটা বলে শট খেলি?” অভিষেক বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে বলেছিলেন, “ঠিক তাই। এটাই তোমার কাজ।” এই কথাগুলো ঈশানের মনে আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করে।
ঈশান নিজেই বলেছেন, “শুরুতে কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম, কিন্তু প্যাট কামিন্স এবং কোচ আমাকে ভরসা দিয়েছেন। হায়দরাবাদের শান্ত পরিবেশ আমাকে স্বস্তি দিয়েছে। ইনিংসটা সত্যিই উপভোগ করেছি।”
ফিরে আসার অনুপ্রেরণা
ঈশান কিশানের এই প্রত্যাবর্তন শুধুমাত্র একটি ইনিংস নয়, এটি এক অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প। কঠিন সময়েও নিজের বিশ্বাস, অধ্যবসায় আর আত্মমর্যাদার ওপর আস্থা রেখে সামনে এগিয়ে গেছেন তিনি। তাঁর এই যাত্রা প্রমাণ করে দেয়, সংকটের মধ্যেও সঠিক মনোভাব আর নিরলস পরিশ্রম মানুষকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
রবিবারের শতরান কেবল ঈশানের জন্য নয়, সমস্ত তরুণ ক্রিকেটারদের জন্যও এক অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে থাকবে।

