ইস্টবেঙ্গল আবারও জয় তুলে নিয়েছে। ঘরের মাঠে নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে হারানোর পর এবার অ্যাওয়ে ম্যাচে চেন্নাইয়িন এফসিকে ২-০ গোলে হারিয়েছে লাল-হলুদ। পিভি বিষ্ণু এবং জিকসন সিংয়ের দুরন্ত গোল দলকে জয়ের পথে নিয়ে গেছে। এই জয় তাদের প্রথমবারের মতো পয়েন্ট তালিকায় ১২ নম্বরে তুলে এনেছে। তবে কোচ অস্কার ব্রুজোর জন্য কিছু চিন্তার বিষয় রয়ে গেছে।
বিষ্ণুর গোল এবং অসাধারণ পারফরম্যান্স
নন্দকুমারকে প্রথম একাদশে না রেখে কোচ ব্রুজো আবারও ভরসা রেখেছিলেন পিভি বিষ্ণুর ওপর। আর সেই ভরসা পূর্ণ করেছেন কেরলের এই ফুটবলার। নাওরেম মহেশের পাসে ক্রেসপোর কাছ থেকে পাওয়া বল ধরে গোলের সামনে গিয়ে সুযোগ কাজে লাগান বিষ্ণু। তাঁর গোল শুধু দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বরং বাঁ দিকের উইং থেকে তাঁর ধারাবাহিক আক্রমণ ও বিপক্ষকে চাপে রাখা দলকে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
ক্রেসপোর চোট এবং হলুদ কার্ড সমস্যা
বিষ্ণুকে গোলের পাস দেওয়ার সময় ক্রেসপো পা মুচকে পড়ে যান এবং স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয়। তবে হতাশার বিষয় হলো, মাঠ ছাড়ার পর বেঞ্চে বসেও অসন্তোষ প্রকাশ করে আরও একটি হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। এটি ছিল তাঁর চতুর্থ হলুদ কার্ড, যার ফলে পরের ওড়িশা ম্যাচে তাঁকে পাওয়া যাবে না। কোচ ব্রুজো নিশ্চিতভাবেই এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবেন, কারণ এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শেষ ১৫ মিনিটের ঝড়ো আক্রমণ
গোল পাওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল যেন এক ঝড় তুলে দেয়। ক্লেটন সিলভা মাঠে নামার পর আক্রমণে গতি বাড়ে। ক্লেটন নিজে দুটি সহজ সুযোগ মিস করলেও নন্দকুমারের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া দলকে আক্রমণে ধার বাড়াতে সাহায্য করে। জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে ক্লেটনের পরিবর্তে ব্রাজিলের রবসনকে আনার পরিকল্পনা থাকলেও এদিনের পারফরম্যান্স ক্লেটনের জন্য স্বস্তির হতে পারে।
ম্যাচের প্রথমার্ধে বল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা
প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল খুব কমই গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে। ফাইনাল থার্ডে বল পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল। চেন্নাইয়ের খেলোয়াড়েরা মাঝমাঠে ফরাসি মিডফিল্ডার মাদিহ তালালকে আটকে রাখায় ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ মাঝপথেই থেমে যাচ্ছিল। এছাড়াও, প্রচুর মিস পাস এবং বল পায়ে রাখার অসুবিধা প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের খেলাকে পিছিয়ে দেয়।
শিল্ডসকে আটকে রাখা: ডিফেন্সের বড় সাফল্য
চেন্নাইয়িন এফসির আক্রমণের মূল চালক কোনর শিল্ডসকে পুরোপুরি আটকে রাখতে সক্ষম হন শৌভিক চক্রবর্তী। আগের ম্যাচে মোহনবাগানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা শিল্ডস এদিন ইস্টবেঙ্গলের কড়া মার্কিংয়ের মুখে ছিলেন। বার দু’বার ভালো বল বাড়ালেও ড্যানিয়েল চিমাচুকু তা কাজে লাগাতে পারেননি। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্স এই দিক থেকে প্রশংসার দাবি রাখে।
জয়: আত্মবিশ্বাস বাড়ালেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে
আইএসএলে টানা দুই জয়ে ইস্টবেঙ্গল পয়েন্ট তালিকার নিচ থেকে উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তবে চোট সমস্যা এবং হলুদ কার্ডের কারণে দলকে পরের ম্যাচগুলোতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে ক্রেসপোর অনুপস্থিতি ওড়িশা ম্যাচে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
কোচ ব্রুজোর মতে, দল জয় পেলেও বলের নিয়ন্ত্রণ, আক্রমণের ধারাবাহিকতা এবং কিছু খেলোয়াড়ের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে বিষ্ণু, জিকসন, এবং শৌভিকের পারফরম্যান্স অবশ্যই আশার আলো দেখাচ্ছে।
অপেক্ষারত ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা
দলের টানা জয়ে সমর্থকেরা যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ব্রুজো ও তাঁর দল যদি নিজেদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠে, তবে আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল নতুন করে নিজের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।