ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ডক্টর ভি নারায়ণের নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়। বর্তমান চেয়ারম্যান এস সোমনাথ আগামী ১৪ জানুয়ারি দায়িত্ব ছাড়বেন, এবং ওই দিনই ভি নারায়ণ নতুন চেয়ারম্যানের পদে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
ডক্টর নারায়ণ শুধু ইসরোর চেয়ারম্যানই নন, তিনি মহাকাশ দফতরের সচিবের দায়িত্বও পালন করবেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী দুই বছরের জন্য তিনি এই দায়িত্বে থাকবেন।
নারায়ণের বিজ্ঞানী হিসেবে ভূমিকা
ডক্টর ভি নারায়ণ ইসরোর অন্যতম অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী এবং মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য। তিনি লিকুইড প্রপালশন সিস্টেম সেন্টার (LPSC)-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, তিনি ভারতের ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই ইঞ্জিন মহাকাশযান উৎক্ষেপণের জন্য অত্যাবশ্যক।
ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন ছাড়াও নারায়ণ বিভিন্ন লঞ্চ ভেহিকল বা উৎক্ষেপণ যান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছেন। ইসরোর আসন্ন গগনযান প্রজেক্ট, যা ভারতের প্রথম মানববাহী মহাকাশ মিশন, তার সঙ্গেও তিনি সরাসরি যুক্ত। এই প্রকল্পের জন্য জাতীয় স্তরের মানব রেট সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

ব্যক্তিগত এবং শিক্ষাগত জীবন
ডক্টর ভি নারায়ণের জন্ম এবং প্রাথমিক শিক্ষা তামিলনাড়ুতে। পরে তিনি পশ্চিমবঙ্গের খড়্গপুর আইআইটিতে ভর্তি হন এবং ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি এখানে স্নাতকোত্তর স্তরে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং এর জন্য তাঁকে রৌপ্য পদকে ভূষিত করা হয়।
এরপর খড়্গপুর আইআইটি থেকেই অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করেন নারায়ণ। গবেষণার ক্ষেত্রেও তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়েছে। পিএইচডি শেষ করার পর, ১৯৮৪ সালে তিনি ইসরোতে যোগ দেন। রকেট এবং মহাকাশ প্রপালশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে, তিনি ধীরে ধীরে ইসরোর শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসেন।
২০১৮ সালে তাঁকে LPSC-এর ডিরেক্টর হিসাবে নিয়োগ করা হয়। এই পদে থাকাকালীন তিনি ইসরোর বিভিন্ন প্রকল্পে নেতৃত্ব দেন এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি উন্নয়নে অবদান রাখেন।
নারায়ণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইসরোর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে গিয়ে ডক্টর নারায়ণ বলেছেন, “আমাদের কাছে ভারতের জন্য একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ রয়েছে। আমি নিশ্চিত, যা ইসরোকে আরও উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। আমাদের প্রতিষ্ঠান অসাধারণ প্রতিভাবান কর্মীদের নিয়ে গঠিত। তাদের সাহায্যে আমরা আরও সাফল্য অর্জন করতে পারব।”
ডক্টর নারায়ণের নেতৃত্বে ইসরো নতুন লক্ষ্য স্থির করবে এবং মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ভারত আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এস সোমনাথের সফল অধ্যায়
ইসরোর বর্তমান চেয়ারম্যান এস সোমনাথ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ইসরো একাধিক সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষত, ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশনের সাফল্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত প্রথমবার চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে রোভার অবতরণ করিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
এস সোমনাথের এই অবদান ইসরোর গৌরবময় অধ্যায়ে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। তাঁর পরবর্তী সময়ে ভি নারায়ণের নেতৃত্বে ইসরো কেমন এগোয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ডক্টর নারায়ণের মতো একজন অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীর হাতে ইসরোর দায়িত্ব আসায় আশা করা যায়, ভারতের মহাকাশ গবেষণা আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগোবে। তাঁর অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্ব ইসরোর গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
কুলতলিতে বাঘের সন্ধানে বনদফতরের তৎপরতা: মাকড়ি নদী পেরিয়ে জলপথে রয়্যাল বেঙ্গলের খোঁজ

