ইমরান খান কি আর বেঁচে নেই?
পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন জুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন— জেলবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি সত্যিই জীবিত? তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন? আদৌ কি তিনি আদিয়ালা জেলে রয়েছেন? নাকি গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়েছে তাঁকে? গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইমরানকে একবারও দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এই প্রেক্ষিতে পাকিস্তান জুড়ে ছড়িয়েছে তীব্র জল্পনা ও আতঙ্ক।
■ পরিবারকে বারবার সাক্ষাৎ-বঞ্চনা— রহস্য আরও ঘনীভূত
১৯ নভেম্বর ইমরানের তিন বোন— আলিমা, উজ়মা ও নুরা খান— রওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু পুলিশ তাঁদের গেটেই আটকে দেয়। অভিযোগ, প্রতিবাদে ধর্না দিলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, এমনকি শারীরিক হেনস্থাও করা হয়।
ইমরানের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন পিটিআই নেতারাও। পাক জেলবিধি অনুযায়ী সপ্তাহে এক বার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অধিকার রয়েছে বন্দির— কিন্তু শাহবাজ শরিফ সরকারের আমলে সেই অধিকার পুরোপুরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
■ জেলেই মৃত্যু হয়েছে? বালোচ সংগঠনের বিস্ফোরক দাবি
পাকিস্তানের মূলধারার সংবাদমাধ্যম ইমরান প্রসঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে নীরব।
কিন্তু বহু বাহিরের সূত্রে দাবি উঠছে—
- আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘আফগান টাইমস’–এর এক্স হ্যান্ডলে সরাসরি বলা হয়েছে—
“ইমরান খান আর বেঁচে নেই।” - নির্বাসিত বালোচিস্তান সরকারের বিদেশ মন্ত্রক সমাজমাধ্যমে লিখেছে,
পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির ও আইএসআইয়ের নির্দেশে জেল খাটতে থাকা ইমরানকে ‘খুন’ করা হয়েছে।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে—
“যদি ইমরানকে সত্যিই হত্যা করা হয়ে থাকে, তবে পাকিস্তান নামের সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রের পতন নিশ্চিত।”
ইমরানের তিন বোনও বুধবার প্রশ্ন তুলেছেন—
“আমাদের ভাই কোথায়? কেন তাঁকে আড়াল করা হচ্ছে?”
■ গুরুতর অসুস্থ? সলিটারি সেল থেকে সরিয়ে অন্যত্র?
ইমরানকে ঘিরে পাক জনমনে তিন ধরনের জল্পনা ছড়িয়েছে—
- সলিটারি সেলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন
- অজানা স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে তাঁকে
- জেলেই মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু সরকার তা গোপন করছে
প্রত্যেকটাই পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সম্ভব— এমনটাই দাবি বিশ্লেষকদের।
■ কেন এত গোপনীয়তা? কড়াকড়ির নেপথ্যে সেনাবাহিনীর রোষ?
২০২৩ সাল থেকে ইমরান খান একের পর এক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বন্দি।
এ বছরের শুরুর দিকে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাঁর ১৪ বছরের জেল হয়।
সাজা হয়েছে স্ত্রী বুশরা বিবিরও।
গত সেপ্টেম্বরে সমাজমাধ্যমে ইমরান অভিযোগ করেছিলেন—
সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের নির্দেশে তাঁকে ও বুশরাকে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
এর ঠিক পর থেকেই সাক্ষাৎ-নিষেধ ও অতি-গোপনীয়তা শুরু হয় আদিয়ালা জেলে।
পাকিস্তানে সেনাবাহিনী সবসময়ই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দু।
ইমরানকে সরিয়ে দিতে চায় সেনা—এমন গুঞ্জন নতুন নয়।
সেই কারণেই তাঁর ‘অদৃশ্য’ হয়ে যাওয়া নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ আরও বেড়েছে।
■ সরকার নীরব, আদালত তড়িঘড়ি শুনানি করছে না— জল্পনা তুঙ্গে
পিটিআই বারবার আদালতে আবেদন করলেও
সভাপাজ শরিফ সরকার নীরব।
জেলে ইমরানের অবস্থান নিয়ে কোনও স্পষ্ট সরকারি বিবৃতি নেই।
জাতীয় মিডিয়া রহস্যজনকভাবে এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলছে।
এ অবস্থায় মানুষ জানতে চাইছে—
“কেন একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হচ্ছে?”
■ পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিস্ফোরণের ঘণ্টাধ্বনি?
ইমরানের জনপ্রিয়তা এখনও তুঙ্গে।
তিনি দেশের সবচেয়ে বড় গণ-সমর্থনসম্পন্ন নেতা।
তাঁর সঙ্গে কোনও অঘটন ঘটলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে।
ইতিমধ্যেই তাঁর অনুগামীরা সতর্ক বার্তা দিয়েছেন—
“ইমরানের ক্ষতি হলে পাকিস্তানের রাস্তায় আগুন জ্বলবে।”
শেষ কথা
ইমরান খান এখন কোথায়? তিনি সুস্থ তো?
এ প্রশ্নের উত্তর জানে না তাঁর পরিবারও।
সরকারের নীরবতা, সেনার অস্বচ্ছ আচরণ এবং বিদেশি সংবাদমাধ্যমের দাবিতে
পাকিস্তানের রাজনৈতিক আকাশে তৈরি হয়েছে ঘনীভূত অজ্ঞাত ত্রাস।
ইমরান খান কি সত্যিই বেঁচে আছেন—
না কি পুরো দেশকে অন্ধকারে রেখে ‘অন্তর্ধান’ করা হয়েছে তাঁকে?

