ইমরান খানকে ঘিরে উত্কণ্ঠা থামছে না!
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলবন্দি হওয়ার পর থেকেই তাঁর অবস্থান ও শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা-জটিলতা চলছে। আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল—ইমরান সুস্থ, তাঁকে অন্য কোথাও সরানো হয়নি। অথচ এই সরকারি দাবির মধ্যেই ইমরানের পরিবার ও তাঁর দলের নেতারা উল্টো দাবি তুলছেন—ইমরানকে ঘিরে স্বচ্ছতারও ঘোর সংকট, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইমরানের বোন নোরিন নিয়াজি সংবাদমাধ্যমকে স্পষ্টভাবে বলেছেন, তাঁদের কাছে কোনও তথ্যই পৌঁছচ্ছে না। দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না, ফোনেও কথা বলা যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, “চার সপ্তাহ ধরে আমাদের ইমরানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আমাদের কিছু জানানো হয় না। দলের লোকেরাও ঢুকতে পারেননি। ভারতে খবর ঘুরছে যে ইমরানকে মেরে ফেলা হয়েছে—এ সব শুনে আতঙ্ক বাড়ছে।”
পরিবারের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে ইমরানের কনিষ্ঠ পুত্র কাসিম খানের পোস্টে। বৃহস্পতিবার তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন—ইমরানকে জেলের ভেতরে ‘ডেথ সেল’-এ একাকী বন্দি করে রাখা হয়েছে। আদালত পরিবারের দেখা করার অনুমতি দিলেও তাঁকে নাকি সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। ৮৪৫ দিন ধরে কারাবন্দি থাকা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঠিক আছেন কি না—এমন প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
কাসিম লিখেছেন, “আমার বাবা গত ছ’সপ্তাহ ধরে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুকূপে রয়েছেন। তাঁর বোনেরা আদালত-অনুমোদিত সাক্ষাতের সুযোগও পাচ্ছেন না। আমাদের পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। তিনি আদৌ জীবিত কি না, সেটাও পরিষ্কার নয়।” একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—ইমরানের কিছু হলে দায় নিতে হবে পাকিস্তান সরকারকে।
এই অভিযোগের আবহে আদিয়ালা জেলের বাইরে উত্তেজনা দেখাতে শুরু করেছে পিটিআই সমর্থকেরা। সমাজমাধ্যমে ঘুরছে ভিডিও—কেউ কেউ জেলের প্রাচীর টপকে ঢোকার চেষ্টাও করছেন। বৃহস্পতিবার পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদি জেলে বৈঠকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পৌঁছলেও তাঁকেও ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এতে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
এদিকে ভারতের কয়েকটি চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ইমরানের আর এক বোন আলিমা খান দাবি করেছেন, নভেম্বর মাসে এক দিনও তাঁদের পরিবার ইমরানের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। যদিও আদালতের পরিষ্কার নির্দেশ—প্রতি মঙ্গলবার ইমরানের আইনজীবী এবং পরিবার-পরিজনকে সাক্ষাতের অনুমতি দিতে হবে।
২০২৩ সাল থেকে একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলবন্দি ইমরান; আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় চলতি বছরের শুরুতেই তাঁকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। একই মামলায় সাজা হয়েছে তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিরও। গত সেপ্টেম্বরে সমাজমাধ্যমে ইমরান অভিযোগ করেছিলেন যে, সেনাপ্রধান মুনিরের নির্দেশে জেলের ভিতরে তাঁর ও বুশরার উপর মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ওই অভিযোগের পর থেকেই সাক্ষাৎ-নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হয়।
সরকার ও জেল কর্তৃপক্ষের দাবি—ইমরান নিরাপদ এবং সুস্থ। কিন্তু তাঁর পরিবার ও সমর্থকদের উদ্বেগ থামছে না। ফলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান অবস্থা ও তাঁর জীবন সুরক্ষা নিয়ে পাকিস্তানে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

