ইন্ডিয়া
সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন, আর এর মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা নিজেদের অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা করছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৯৯-এ পৌঁছানোর পর থেকেই দলটির রাজনৈতিক প্রভাব কিছুটা বেড়েছিল। তবে এখন, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনে তৃণমূলের বিজয় পরবর্তী আলোচনায়, দলটি দাবি করছে যে বিরোধী মঞ্চ “ইন্ডিয়া”-তে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
তৃণমূলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ৬টি আসনে তারা যে দাপটের সঙ্গে জয়লাভ করেছে, তাতে বিরোধী জোটে তাদের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। কংগ্রেস এবং শিবসেনার মতো দলগুলি মহারাষ্ট্রে ভরাডুবির পর থেকে তৃণমূলের প্রতি সমর্থনও বাড়ছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন মন্তব্য করেছেন, “এটা মনে রাখতে হবে, ‘ইন্ডিয়া‘ ব্লকে আমাদের সঙ্গে কোনো নির্বাচনী জোট নেই। তবুও, কংগ্রেস এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি, তা এই শক্তি বৃদ্ধির ইঙ্গিত।”
রাজনৈতিক মহলে অনেকেই মনে করছেন, কংগ্রেসের এই সাময়িক প্রতাপ আর দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বিশেষ করে হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের ফলাফলের পর কংগ্রেসের অবস্থান কিছুটা দুর্বল হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, কংগ্রেসের এই ব্যর্থতা “পুনর্মূষিক ভব” হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিরোধী জোটে তাদের মুখ্য ভূমিকা এখন সীমিত। তৃণমূলের এমন মনোভাব কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং রাহুল গান্ধীকে ইঙ্গিত করে এসেছে।
এদিকে, কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এই মন্তব্যের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “তৃণমূল তো মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে কোনো নির্বাচনে লড়েনি, তাই তাদের মন্তব্য নিয়ে পরে কথা বলব।” তৃণমূলের রাজনীতির জটিলতা এখন আরও স্পষ্ট, কারণ তারা কংগ্রেসের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক বেশি সমালোচনা করছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, কংগ্রেস পরিকল্পনা করেছিল, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে ভালো ফল করে নিজের শক্তি বাড়িয়ে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে আরও বেশি ক্ষমতা দাবি করবে। তবে বাস্তবে দুটি রাজ্যেই তাদের ফলাফল প্রত্যাশিত ছিল না। এর মধ্যে, কংগ্রেসকে নিয়ে তৃণমূলের একটা পুরনো অভিযোগও সামনে এসেছে যে, লোকসভার আসন রফায় কংগ্রেস একপ্রকার দেরি করেছে।
তৃণমূল মনে করছে, মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতির প্রভাব জাতীয় স্তরের বিরোধী রাজনীতিতে পড়বে এবং কংগ্রেসের ব্যর্থতা তাদের অবস্থান দুর্বল করেছে। তারা নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে এককভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিকে মনোযোগী, বিশেষত গত জুলাই মাসে মহারাষ্ট্রে মুম্বই সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত বদলের ঘটনা সামনে আনছে তৃণমূল। তখনই মমতা বলেছিলেন, তিনি মহাবিকাশ আঘাড়ী দলের হয়ে প্রচার করবেন, তবে পরে পরিস্থিতি বুঝে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
এখন, সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন নিয়ে তৃণমূল তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করছে। তৃণমূলের দাবি, তারা একক লড়াইয়ে বিজেপিকে বারবার হারাচ্ছে এবং এই জয়গুলো তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি আরও দৃঢ় করছে।
এখন সকলের নজর রয়েছে, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধী দলগুলির মধ্যে কি ধরনের সমীকরণ তৈরি হয় এবং তা তৃণমূলের শক্তিকে আরও বাড়াতে সাহায্য করবে কি না।

