ইন্ডিগোকে কেন্দ্রের হুঁশিয়ারি!
টানা ছয় দিন ধরে উড়ান বাতিল এবং সময়সূচি ভেস্তে যাওয়ার জেরে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা যাত্রীদের উদ্দেশে রবিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক জানাল, ইন্ডিগো ইতিমধ্যেই টিকিট–ভাড়া বাবদ মোট ৬১০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। পাশাপাশি, বিমানসংস্থার কাছে জমা থাকা তিন হাজারেরও বেশি মালপত্র যাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
রবিবার রাত ৮টার মধ্যে যাত্রীদের সমস্ত টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ ছিল কেন্দ্রের। সেই নির্দেশ অনুযায়ী ফেরত প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে দাবি মন্ত্রকের। এখনও কিছু ফেরত বাকি থাকলেও সেটি ফেরানোর কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। অসুবিধায় পড়া যাত্রীদের মালপত্র ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াও প্রায় সম্পূর্ণ।
পরিস্থিতি কী অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে আলাদা বিবৃতি দিয়েছে ইন্ডিগো–ও। সংস্থার দাবি, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আগের ছন্দে ফিরছে। যদিও রবিবারই ৬৫০টি উড়ান বাতিল করতে হয়েছে, তবু ১,৬৫০টি উড়ান নির্ধারিত সময়েই পরিচালিত হয়েছে। সাধারণ নিয়মে প্রতি দিন প্রায় ২,৩০০টি উড়ান চালায় ইন্ডিগো। সেই তুলনায় শুক্রবার মাত্র ৭০৬টি উড়ান চলেছিল—যা পরিস্থিতির শোচনীয় অবস্থাই স্পষ্ট করেছিল।
তবে রবিবার সেই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ফলে যাত্রীদের স্বস্তি কিছুটা ফিরেছে। দেশের ১৩৮টি গন্তব্যের মধ্যে ১৩৭টি রুটে পরিষেবা সচল রয়েছে। সংস্থার দাবি, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে পরিষেবা।
এ ছাড়া যাত্রী সুবিধার কথা মাথায় রেখে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকিট বাতিল ও রিবুকিংয়ে সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্ডিগো।
ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স জানিয়েছেন,
“যাত্রীদের ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে আমরা সময় মতো পরিষেবা দিতে পারছি। রিফান্ড ও রিবুকিং সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধানের জন্য আলাদা সাপোর্ট সেল তৈরি করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, যে সব উড়ান বাতিল করতে হচ্ছে, তা আগে থেকেই যাত্রীদের জানানো হচ্ছে যাতে বিমানবন্দরে অযথা ভিড় না বাড়ে। এক অভ্যন্তরীণ ভিডিয়ো বার্তায় তিনি আশ্বাস দিয়েছেন,
“ধাপে ধাপে সব স্বাভাবিক হবে।”
অন্য দিকে, পরিস্থিতি ঘিরে কেন্দ্রও কড়া অবস্থানে। শনিবারই দেশের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ, ইন্ডিগোকে শো কজ নোটিস পাঠিয়েছে—এত বড় বিশৃঙ্খলা কী ভাবে তৈরি হল, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হলেও ইন্ডিগো অতিরিক্ত এক দিনের সময় চেয়েছে।
ইন্ডিগোর অন্দরের কাজকর্ম নিয়েও নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। সংস্থার দীর্ঘদিনের কর্মচারী পরিচয়ে এক ব্যক্তি খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, কর্মীদের ওপর অমানবিক চাপ তৈরি করা হয়, ভয় দেখানো হয়, এবং আপত্তি জানালে চুপ করে থাকতে বাধ্য করা হয়।
সব মিলিয়ে, ছয় দিনের টানা বিপর্যয়ে দেশের বৃহত্তম বিমানসংস্থার ওপর যাত্রীদের আস্থা কিছুটা নড়ে গেলেও, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া শুরু করেছে। এখন দেখার বিষয়—আগামী কয়েক দিনে কত দ্রুত স্বাভাবিক হয় আকাশপথের এই বিশাল নেটওয়ার্ক।

