Sunday, February 23, 2025

ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম ভূমিকম্প! পলকে ধ্বংস শহর, মুছে গেল আট লক্ষ প্রাণ

Share

ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম ভূমিকম্প!

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইতিহাসে ভূমিকম্প এমন একটি বিপর্যয়, যা মুহূর্তের মধ্যে সভ্যতাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে পারে। ইতিহাসে এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল ১৫৫৬ সালের ২৩ জানুয়ারি, চীনের শানসি প্রদেশে। শানসি ভূমিকম্প, যা “জিয়াজিং মহাভূমিকম্প” নামেও পরিচিত, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৮ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল এই বিপর্যয়।

ভূমিকম্পের উৎপত্তি এবং কম্পনের মাত্রা

১৫৫৬ সালের শীতের সকালে শানসি, শানসি, হেনান এবং গানসু প্রদেশ জুড়ে অনুভূত হয় ভয়াবহ কম্পন। আধুনিক রিখটার স্কেল না থাকায় সঠিক মাত্রা মাপা সম্ভব হয়নি। তবে গবেষকদের মতে, কম্পনের মাত্রা ছিল ৮ থেকে ৮.৩। এই কম্পনের উৎপত্তি হয়েছিল ওয়েই নদীর উপত্যকায়। প্রবল কম্পনে মাটির নিচ থেকে বিকট শব্দ বেরিয়ে আসে, ফাটল ধরে ভূভাগে, এবং সেই ফাটল থেকে গলগল করে জল বেরিয়ে আসতে থাকে।

অতুলনীয় প্রাণহানি

১৫৫৬ সালের বিশ্ব জনসংখ্যা ছিল আজকের জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ। প্রায় ৪০ কোটির সেই সময়ে, এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় প্রায় ৮ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ। গবেষণায় জানা যায়, এই বিপর্যয়ে সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ মানুষের, যারা ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের গুহা গৃহে চাপা পড়ে মারা যান। পরবর্তী সময়ে ধসে যাওয়া বাড়ি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যু মিছিল গিয়ে দাঁড়ায় আরও ৭ লক্ষ ৩০ হাজারে।

শুধু তা-ই নয়, এই ভূমিকম্পের পরবর্তী পরিণতিতে দুর্ভিক্ষ, রোগবালাই এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ে। শানসি প্রদেশে এমন ভয়াবহ প্রাণহানি মানব ইতিহাসে আর কখনও দেখা যায়নি।

ইয়াওডং’ গুহাগুলি এবং বিপর্যয়ের কারণ

সেই সময়ে শানসি প্রদেশের মানুষের মধ্যে গুহাবাস ছিল প্রচলিত। এই গুহাগুলিকে “ইয়াওডং” বলা হত, যা স্থানীয় পাথর ও মাটির তৈরি। ঘনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলে, গুহাগুলি ভূমিকম্পের ফলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। পাথরের চাঁই চাপা পড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান লক্ষ লক্ষ মানুষ।

তদুপরি, বাড়িগুলি তৈরি হত অত্যন্ত ভঙ্গুর উপকরণ দিয়ে, যা কম্পনের তীব্রতা সহ্য করতে পারেনি। ভূমিকম্পের ফলে পুরো শানসি শহর কার্যত ধুলোয় পরিণত হয়। পাহাড় ধসে গোটা জনবসতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

পরাঘাত এবং ধ্বংসের ব্যাপ্তি

প্রাথমিক ভূমিকম্পের পরপরই শুরু হয় একাধিক পরাঘাত। ভূমিকম্পের পরদিন সকাল পর্যন্ত এই কম্পন অনুভূত হতে থাকে, যা আরও ভূমিধস সৃষ্টি করে। মাটি ফেটে জল বেরিয়ে আসে, সমতল ভূমি ভাঁজ হয়ে ছোট ছোট পাহাড় তৈরি হয়। ইয়েলো নদী এবং ওয়েই নদী প্লাবিত হয়ে বন্যা সৃষ্টি করে, যা জনজীবনকে আরও বিপর্যস্ত করে তোলে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

এই ভূমিকম্পের কারণে শানসি এবং সংলগ্ন এলাকার ভৌগোলিক পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। বিপুল পরিমাণ জমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ফসলহীনতা এবং বন্যার কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যা মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। রোগবালাই ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণে প্রদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে।

শিক্ষা এবং পরিবর্তন

শানসি ভূমিকম্প ছিল এক ভয়াবহ শিক্ষণীয় অধ্যায়। এই বিপর্যয়ের পর চীনের মানুষ বুঝতে পারে গুহাবাসের ঝুঁকি। তারা ধীরে ধীরে পাথরের গুহা ছেড়ে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে হালকা বাড়ি তৈরির দিকে এগিয়ে যায়। ভবিষ্যতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য মানুষ সচেতন হতে শুরু করে।

আজকের দৃষ্টিভঙ্গি

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি আজকের মতো ঘনবসতি ও আধুনিক নির্মাণশৈলী সেই সময়ে থাকত, তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিত। শানসি ভূমিকম্পের ভয়াবহতা আজকের দিনেও মানবজাতির জন্য একটি মর্মস্পর্শী উদাহরণ। এটি শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং মানবসভ্যতার দুর্বল দিকগুলির প্রতি এক করুণ ইঙ্গিত।

১৫৫৬ সালের এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রকৃতির সামনে মানুষ কত অসহায়। আধুনিক প্রযুক্তি এবং পূর্বাভাসের উন্নতিও আজ পর্যন্ত ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ পুরোপুরি আটকাতে পারেনি। তাই, এই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় একটি দুঃখজনক শিক্ষা হয়ে থেকে যাবে।

একের পর এক হুমকির মাঝে সলমন হারালেন প্রিয়জনকে! পাশে রয়েছেন বান্ধবী ইউলিয়া

Read more

Local News