ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রুশ তেল বিক্রি!
রাশিয়া থেকে সস্তা দরে অপরিশোধিত তেল কিনে দীর্ঘদিন ধরে তা পরিশোধন করে ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত গুজরাতের খ্যাতনামা সংস্থা নায়রা এনার্জি। কিন্তু চলতি বছরের জুলাইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ ছিল, নায়রা রাশিয়ার ‘উরাল ক্রুড’ পরিশোধন করে ইইউ-র ২৭টি দেশে বিক্রি করছিল, যা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরিপন্থী।
এই নিষেধাজ্ঞা নায়রার জন্য বড় ধাক্কা হলেও সংস্থা বেশি সময় নষ্ট করেনি। মাত্র এক মাসের মধ্যেই তারা খুঁজে নিয়েছে নতুন ক্রেতা—চীন। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৮ জুলাই নায়রার টার্মিনাল থেকে ‘ইএম জেনিথ’ নামের মালবাহী জাহাজ চীনের ঝোশানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তাতে ছিল প্রায় পাঁচ লাখ ব্যারেল নিম্ন সালফার ডিজেল। চার বছর পর প্রথমবারের মতো ভারত চীনকে জ্বালানি রপ্তানি করল, যা কূটনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।
নায়রার ৪৯.১৩ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে রুশ জ্বালানি সংস্থা রসনেফট-এর হাতে। এই অংশীদারিত্বই ইইউ নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ বলে মনে করা হয়। নিষেধাজ্ঞার পর আন্তর্জাতিক লেনদেন কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে উৎপাদনও কমিয়ে দিয়েছিল নায়রা। পরে আগাম অর্থ, ঋণপত্র বা বন্ডের বিনিময়ে বিদেশে তেলপণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় তারা—চীনও সেই তালিকায় যুক্ত হয়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। এর ফলে এসবিআই সাময়িকভাবে নায়রার আন্তর্জাতিক মুদ্রা লেনদেন স্থগিত করে। ট্রাম্প ও পশ্চিমা জোটের মতে, ভারত-চীন মিলে সস্তা দরে রুশ তেল কিনে চলায় ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থসংস্থান অব্যাহত থাকছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পুতিন ভারতকে সস্তা তেলে বড় ছাড় দেন, যা ভারতের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হয়। ইউরোপে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে সেই তেল এখন নতুন গন্তব্য—চীন। অন্যদিকে, চীনও বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কও বদলাতে শুরু করেছে। গালওয়ান সংঘর্ষের পর বন্ধ থাকা চীনের ইউরিয়া রপ্তানি আবার শুরু হয়েছে, যা ভারতের কৃষি খাতে বড় স্বস্তি দেবে। এছাড়া আগস্টের শেষে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেপ্টেম্বরে ভারতে আসতে পারেন পুতিনও।
বিশ্লেষকদের মতে, নায়রার এই চীনমুখী রপ্তানি শুধু বাণিজ্য নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতির বড় ইঙ্গিত। পুতিন হয়তো ভারত ও চীনকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিমুখী জোট তৈরির পথে এগোচ্ছেন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও হুমকি সত্ত্বেও ভারত নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থে বিকল্প বাজারের সন্ধান করছে। ফলে আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের আগে এই বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সমীকরণ বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড় এনে দিতে পারে।
শুল্কযুদ্ধের মাঝেই আমেরিকা সফরে মোদী? ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে

