Saturday, May 10, 2025

“আলোচনার অধিকার নেই”—রাজ্যপালকে সংবিধান মনে করালেন মন্ত্রী শোভনদেব

Share

রাজ্যপালকে সংবিধান মনে করালেন মন্ত্রী শোভনদেব!

তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণের পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার ঝড়। আর সেই রেশেই এ বার বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকেও সংবিধানের পাঠ পড়ালেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, রাজ্যপালের কোনও বিল আটকে রাখার অধিকার নেই, এবং সংবিধান কোথাও বলে না যে তিনি আধিকারিকদের ডেকে এনে আলোচনা করতে পারেন।

গত কয়েক বছরে রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল রাজ্যপালের টেবিলে পড়ে রয়েছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত ২৩টি বিল রাজভবনে আটকে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘অপরাজিতা বিল’ বা গণপিটুনি প্রতিরোধ বিলের মতো স্পর্শকাতর বিষয়।

এর উত্তরে রাজভবনের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, রাজ্যপাল কয়েকটি বিল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

এই প্রসঙ্গেই বৃহস্পতিবার পাল্টা মুখ খোলেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সংবিধানে পরিষ্কার বলা আছে— রাজ্যপালের কোনও বিল অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটকে রাখার ক্ষমতা নেই। যদি কোনও আইনি আপত্তি থাকে, তা তিনি সরকারকে লিখে জানাতে পারেন। কিন্তু ডেকে পাঠাবেন, আলোচনা করবেন— এমন কোনও বিধান সংবিধানে নেই। আমি বহু বার সংবিধান পড়েছি।”

মন্ত্রী আরও বলেন, “যদি রাজ্যপালের মনে হয় কোনও বিষয় রাষ্ট্রপতির বিবেচনার প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে তিনি বিল পাঠাতে পারেন। কিন্তু অনুমোদন না দিয়ে বসে থাকাটা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘এই ধরনের বিল আটকে রাখা স্পষ্টতই রাজ্যপালের কর্তৃত্বের অপপ্রয়োগ। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রাজ্যপালের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেটা মানা হচ্ছে না।’’

রাজভবনের তরফে অবশ্য নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের মধ্যে ১১টি বিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত এবং একটি অপরাজিতা বিল। আরও জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখনও না পৌঁছনোয় সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে।

এই ২৩টি বিলের মধ্যে পাঁচটির ক্ষেত্রে রাজ্যপাল সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে ‘টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং বিল’, ‘লেবার বিল’, ‘অ্যালুভিয়াল ল্যান্ড বিল’, ‘কলকাতা মিউনিসিপ্যাল বিল’ এবং ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড সংশোধনী’ বিল। এসব ক্ষেত্রেই রাজভবনের বক্তব্য— আলোচনা না হওয়ায় বিল আটকে রয়েছে।

তবে রাজ্য সরকারের যুক্তি একেবারেই আলাদা। তাঁদের দাবি, সংবিধানে এই ধরনের আলোচনার কোনও উল্লেখ নেই। তাই রাজ্যপাল সংবিধানের গণ্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছেন বলেই মনে করছে নবান্ন।

এই বিতর্ক যত এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে রাজভবন ও রাজ্য সরকারের সম্পর্কের টানাপড়েন আরও জটিল আকার নিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় ও সংবিধানের ব্যাখ্যাই হয়তো এই বিবাদে শেষ কথা বলবে।

তালা ভাঙার পাল্টা তালা! কসবা থেকে হুগলি—চাকরিহারাদের ক্ষোভে কাঁপছে রাজ্য

Read more

Local News