Monday, December 1, 2025

আলিয়ার ছাত্রাবাসে ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ: রহস্যে ঘেরা মৃত্যু

Share

আলিয়ার ছাত্রাবাসে ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ

নিউ টাউনের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে এক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় উনিশতলায় এই ঘটনা ঘটে। মৃতের নাম আব্দুর রহমান (২৪)। তাঁর বাড়ি মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগরের কালীনগর গ্রামে। পরিবারের দাবি, এটি খুনের ঘটনা। তবে পুলিশ বিষয়টিকে আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে তদন্ত করছে। এখনও কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি, তাই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্তের পরেই।

আব্দুরের জীবন ও ছাত্রাবাসের সময়

আব্দুর রহমান বিগত তিন বছর ধরে আলিয়ার ছাত্রাবাসে বসবাস করছিলেন। পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। পরিবার জানায়, ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। কৃষিজীবী পরিবারের সন্তান আব্দুর চার ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন অন্যতম উজ্জ্বল। এই বছর স্নাতকোত্তর শেষ করার পর তিনি কিছুদিন বাড়িতেই ছিলেন। পরে কলকাতায় ফিরে আসেন এক বন্ধুর পরামর্শে, যিনি তাঁকে জুনিয়রদের পড়িয়ে উচ্চশিক্ষার খরচ চালানোর কথা বলেছিলেন।

রহস্যময় মৃত্যু

সোমবার বিকেলে আব্দুরকে শেষবার দেখা গিয়েছিল। তার পর সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসের উনিশতলার ছাদে এক পরিচিত তাঁর ঘরের দরজায় ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে দরজা ধাক্কা দিলে কিছু না দেখে তিনি উঁচু জায়গায় উঠে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। খবর দেওয়ার পর দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের দাবি ও সন্দেহ

পরিবারের দাবি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। আব্দুরের বোন জায়েদা বলেন, ‘‘সোমবার বিকেলেও দাদা কবাডি খেলায় জয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্টেটাস দিয়েছিল। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের বিশ্বাস, কেউ তাঁকে খুন করেছে।’’ আব্দুরের মা সানুয়ারা বিবি বলেন, ‘‘গত দু’দিন ঠিকমতো ফোনে কথা বলছিল না। কী এমন ঘটল যে আমার ছেলেকে হারাতে হলো?’’

তদন্তের অগ্রগতি

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আব্দুর খুবই হাসিখুশি ছিল। সোমবার সন্ধ্যাতেও অনেকে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখেছে। অস্বাভাবিক কিছু বুঝতে পারিনি।’’ কেউ কেউ ধারণা করছেন, আব্দুরের কোনও সহপাঠীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে এমনটা ঘটতে পারে। তবে পুলিশ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত চালাচ্ছে।

পরিবারের লড়াই

মৃতের ভাই রকিম শেখ ইতিমধ্যে থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাইয়ের মৃত্যু ঘিরে রহস্য রয়েছে। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’’

বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনের অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন ঘটনার বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি। তবে তারা তদন্তের জন্য পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। ঘটনার জেরে ছাত্রাবাসে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

আব্দুরের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে পরিবার ও সহপাঠীরা। তাদের একটাই আশা, এই মৃত্যুর রহস্য শীঘ্রই উদ্ঘাটিত হবে।

Read more

Local News