আর্থিক অনিয়ম
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার সুবীর মৈত্রকে আর্থিক অনিয়মসহ একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুবীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি দীর্ঘ তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে এই পদক্ষেপের সম্মুখীন হতে হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, সুবীর মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর থেকেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছিলেন কর্তৃপক্ষ। তদন্তকারী দল ৫ নভেম্বর তাঁদের রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে সুবীরকে সাত দিনের মধ্যে তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা, এগ্জ়িকিউটিভ কাউন্সিল, চূড়ান্ত বৈঠকে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বরখাস্তের সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীর মৈত্রের বরখাস্তের বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, প্রাক্তন রেজিস্ট্রারকে অবিলম্বে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে এবং তিনি কোনও অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধাও পাবেন না। আরও জানানো হয়েছে যে, তাঁর দায়িত্ব পালনের সময় যেসব আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ফেরত দিতে বাধ্য হবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রার পদে থাকা অবস্থায় সুবীরের কাজকর্ম নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছিল। অভিযোগ উঠেছিল যে, তিনি আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম করেছেন এবং তাঁর কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলাকে ব্যাহত করেছে। তদন্ত রিপোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলি প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার
সুবীর মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তাঁর পদটি প্রশ্নের মুখে পড়ে। তদন্ত চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আশিস সামন্তকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ করে। আশিস সামন্ত বর্তমানে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্তা
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের বার্তায় স্পষ্ট করেছেন যে, আর্থিক অনিয়ম বা দায়িত্বে অবহেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও স্তরেই বরদাস্ত করা হবে না। তারা আরও জানায় যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ ভবিষ্যতেও গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। একাংশের মতে, কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ সঠিক, কারণ এটি শিক্ষার মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, অন্য একটি অংশ মনে করছে যে, পুরো বিষয়টি আরও আগে সমাধান করা উচিত ছিল।
উপসংহার
সুবীর মৈত্রের বরখাস্তের ঘটনা প্রমাণ করে যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য এমন কঠোর পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রয়োজন। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আরও কার্যকরী মনিটরিং সিস্টেম প্রণয়ন করা জরুরি।

