আরব সাগরে উত্তেজনার আগুন!
আরব সাগরে ফের উত্তেজনার ঢেউ। ভারতের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর থেকেই দিল্লি-ইসলামাবাদ সম্পর্ক আরও তপ্ত। সেই উত্তেজনার মধ্যেই করাচি উপকূল ঘেঁষা জলসীমায় নিজেদের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে পাকিস্তান। পাল্টা জবাবে ভারতীয় নৌসেনাও শক্তিপ্রদর্শনে নেমে পড়েছে। ফলে সমুদ্রপথেই এবার সংঘাতের আশঙ্কা জোরাল হচ্ছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে’ রণতরী নামিয়ে যুদ্ধাভ্যাস চালিয়েছে ইসলামাবাদ। গুলি ছুড়ে মহড়া করার পাশাপাশি অংশ নিয়েছে লড়াকু কপ্টারও। করাচি-সংলগ্ন আরব সাগরের এই মহড়াকে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন ‘শক্তিপ্রদর্শনের অভিপ্রায়’ হিসেবে। তবে এইসবের মধ্যেই পাক সংবাদমাধ্যম এক ধাপ এগিয়ে দাবি করেছে— ভারতের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ পাকিস্তানের জলসীমা থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে! এমনকি স্যাটেলাইট ছবিরও দাবি করা হয়। যদিও পরে প্রমাণ মেলে, ছবি পুরনো এবং বিক্রান্তের সঙ্গে থাকা ভারতীয় ডেস্ট্রয়ারকেই পাক রণতরী বলে চালানো হয়েছে।
অন্য দিকে ভারত কিন্তু এক ইঞ্চিও সরেনি। বরং পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিতে একাধিক শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ, ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট এবং পরমাণু ডুবোজাহাজ নামানো হয়েছে আরব সাগরে। আইএনএস বিক্রান্তের সঙ্গে রয়েছে আইএনএস সুরাট, যেখান থেকে ব্রহ্মোস সুপারসনিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা হয়েছে করাচি বন্দর চোখের সামনে রেখেই। ভারতের পক্ষ থেকে এও জানানো হয়েছে— যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে বাহিনী।
‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’ অনুযায়ী, ভারত এখন সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ শক্তিধর দেশ। নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৯৩টি যুদ্ধজাহাজ, যার মধ্যে দুটি বিমানবাহী রণতরী, তিনটি পরমাণু সাবমেরিন এবং একাধিক ডেস্ট্রয়ার ও ফ্রিগেট। তুলনায় পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে নেই কোনও বিমানবাহী জাহাজ বা পরমাণু ডুবোজাহাজ। তাই সরাসরি সংঘর্ষে ভারতীয় নৌসেনার দাপটই বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
পাকিস্তান যদিও শান্ত নয়। দেশটির তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন, ভারত আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক অভিযান চালাতে পারে— এমন বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে তাদের হাতে। এমনকি পরমাণু হামলার হুমকিও এসেছে পাক রাজনীতিকদের মুখে। তবে নয়াদিল্লি এ হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— পহেলগাঁও হামলার বদলা হবেই।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৭১ সালের ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’ বা ‘অপারেশন পাইথন’-এর মতো অভিযান ফের চালাতে পারে ভারত। সেই সময় করাচি বন্দরেই পাক যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছিল ভারতীয় নৌসেনা। এবারও যদি পরিস্থিতি সেদিকে গড়ায়, তবে আরব সাগরই হয়ে উঠতে পারে যুদ্ধক্ষেত্র।
ভারতীয় সেনা ইতিমধ্যেই তিন বাহিনীকেই সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। প্রতিরক্ষার পাশাপাশি এখন প্রত্যাঘাতের অপেক্ষা। আর এই উত্তেজনার মধ্যেই ভারতের শক্তি দেখিয়ে চলেছে ‘সমুদ্রের সম্রাট’ বিক্রান্ত।