Friday, January 31, 2025

আরজি কর মামলায় সঞ্জয়ের চিৎকার: গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, তাই অপরাধ নয়!

Share

আরজি কর মামলায় সঞ্জয়ের চিৎকার: গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, তাই অপরাধ নয়!

শিয়ালদহ আদালতে আরজি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া চিকিৎসক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। রায় শুনে আদালতে সঞ্জয়ের মধ্যে বিপুল আবেগ ও অশ্রু ছিল। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বিচারকের কাছে চিৎকার করেন, “আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা রয়েছে, আমি কীভাবে এই অপরাধ করতে পারি?” সেই সঞ্জয়, যিনি বিচারকের সামনে নিজের নির্দোষত্ব প্রমাণের জন্য নানা দাবি তুলেছিলেন, অবশেষে দোষী হিসেবে চিহ্নিত হলেন।

ঘটনা কী ছিল?

গত ৯ আগস্ট, কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে এক মহিলা চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরদিনই কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে। এরপর সিবিআই এই মামলাটি গ্রহণ করে এবং সঞ্জয়কে একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে। পুলিশ জানিয়েছিল, সেমিনার হলের সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয়কে দেখা গিয়েছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সময়ে তার গলায় একটি ব্লুটুথ হেডফোন ছিল, যা আধ ঘণ্টা পর বের হওয়ার সময় পাওয়া যায়নি।

সঞ্জয়ের দাবি ও চিৎকার

শিয়ালদহ আদালতে রায় ঘোষণার সময় সঞ্জয় উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং আদালতের মধ্যে চিৎকার করতে শুরু করেন। তার দাবি ছিল, “আমি নির্দোষ, আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। কীভাবে আমি এই অপরাধ করতে পারি, আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা আছে!” এ কথা বলে তিনি আরও জানান, “আমার রুদ্রাক্ষের মালা ছিঁড়ে পড়তে পারত, যদি আমি সত্যিই এই কাজ করতাম।”

বিচারক তার প্রতিক্রিয়া শুনে জানান, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সঞ্জয়ের আইনজীবীও তার নির্দোষত্বের পক্ষে জোরালো দাবি তুললেও, সিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারক তার দাবি খারিজ করে দেন।

বিচারকের নির্দেশ এবং সাজা

বিচারক অনির্বাণ দাস জানিয়েছেন, “যে ভাবে সঞ্জয় গলা চেপে ধরেছিলেন, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে তিনি পরিকল্পনা করেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজা হতে পারে।” সঞ্জয় ও তার আইনজীবীকে সোমবার সাজার পরবর্তী শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

সঞ্জয়ের চিৎকার এবং জোরালো দাবির মধ্যেও বিচারকের মুখ থেকে যেভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘোষণা আসে, তা আদালত চত্বরে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। আদালতের প্রতিক্রিয়া ছিল, “তুমি অপরাধী, তুমি সাজা পাবে। তবে কী ধরনের সাজা, তা সোমবার ঠিক করা হবে।”

নির্যাতিতার পরিবারের আবেগ

রায়ের পর, নির্যাতিতার বাবা-মা বিচারের জন্য বিচারকের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। তারা বলেন, “আপনার উপর যে আস্থা রেখেছিলাম, আপনি আমাদের আশা পূর্ণ করেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।” নির্যাতিতার পরিবারের কাছে, এই রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ জয় হলেও, তাদের জন্য তা কখনও সম্পূর্ণ শান্তি আনে না।

রুদ্রাক্ষের মালার প্রসঙ্গ

এদিকে, সঞ্জয় রায়ের গলায় রুদ্রাক্ষের মালা নিয়ে তার দাবি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। তদন্তের সময় পুলিশের কাছে বা গ্রেফতারির পর রুদ্রাক্ষের মালার কথা কখনও সামনে আসেনি। ঘটনাস্থল থেকে এমন কোনও মালা উদ্ধার করা হয়নি, এবং রুদ্রাক্ষের মালার দাবির ব্যাপারে নির্যাতিতার আইনজীবী অমর্ত্য দে মন্তব্য করেছেন, “যদি মালা এতই গুরুত্বপূর্ণ হত, তা হলে তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকে তাও উল্লেখ করা হতো।”

এনকাউন্টার থেকে সাজা: সঞ্জয়ের ভবিষ্যৎ

রায়ের পর আদালত জানিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় সঞ্জয়কে সর্বোচ্চ ১০ বছর অথবা তার বেশি কারাদণ্ড হতে পারে। খুনের ঘটনায় তাকে ২৫ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজা হতে পারে। সঞ্জয় গলা টিপে হত্যা করায়, তাকে মৃত্যুদণ্ডেরও সম্মুখীন হতে পারে। এখন শুধু বাকি রয়েছে সাজা ঘোষণার পরের সোমবার, যখন তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে।

শিয়ালদহ আদালতের এই রায়, সঞ্জয়ের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, একদিকে যেমন ন্যায়ের জয়, তেমনি অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার চ্যালেঞ্জেরও অংশ।

সইফ আলি খানকে কুপিয়েছে এই ব্যক্তি? সিসিটিভি-তে ধরা পড়ল অভিযুক্তের ছবি

Read more

Local News