আরজি কর আন্দোলনে সাড়ে তিন কোটি অনুদান!
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে যে তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল, তার অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি ছিলেন রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তাররা। এই আন্দোলনের জন্য তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা অনুদান। আর এই বিশাল অঙ্কের অনুদানের হিসাব দিলেন তাঁরা—খরচ কোথায় হয়েছে, কত টাকা এখনও তহবিলে রয়ে গেছে, জানিয়ে দিলেন স্বচ্ছতার বার্তা।
বুধবার আরজি কর হাসপাতালে আয়োজিত গণকনভেনশনে জুনিয়র ডাক্তারদের তিনটি সংগঠন তাদের নিজস্ব আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করে।
তিন সংগঠন হল —
🔹 ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট (WBJDF)
🔹 আরজি কর রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন (RGKAR RDA)
🔹 কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন (MCK RDA)
কত পেল, কত খরচ?
WBJDF জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তারা পেয়েছে ২ কোটি ২৬ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা, যার মধ্যে খরচ হয়েছে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা।
মূল খরচ হয়েছে—
- অনশনমঞ্চ তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে: ₹৪.৬০ লক্ষ
- সভা-সমাবেশে: ₹২.৫ লক্ষ
- আইনি লড়াইয়ে: ₹১৯.৯০ লক্ষ
- ওয়েবসাইট ও অ্যাপ তৈরিতে: ₹৪৪ হাজার
RGKAR RDA পেয়েছে ৫৬ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা, খরচ করেছে ৪৮ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা।
তাদের ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
- আরজি করে ধর্না মঞ্চে: ₹৬.২৬ লক্ষ
- স্বাস্থ্যভবন আন্দোলনে: ₹৫.৮৮ লক্ষ
- নির্যাতিতার মূর্তি নির্মাণে: ₹৫১ হাজার
- আইনি লড়াইয়ে: ₹২৫.২০ লক্ষ
MCK RDA সংগ্রহ করেছে ৭৫ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা, খরচ করেছে ৫৭ লক্ষ ৫ হাজার টাকা।
তাদের খরচের মধ্যে রয়েছে—
- লালবাজার অভিযানে: ₹৬৬,৬১৬
- মহালয়ার মিছিলে: ₹৭.১৬ লক্ষ
- স্বাস্থ্যভবন অভিযান: ₹১২.০৭ লক্ষ
- আইনি সহায়তায়: ₹২.২৬ লক্ষ
এখনো বাকি কত?
এই তিন সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী এখনও তহবিলে রয়ে গেছে মোট ২ কোটি ২৯ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। কীভাবে এই টাকা ব্যবহার হবে, তা নিয়েও স্পষ্ট পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
দেবাশিস হালদার, আন্দোলনের অন্যতম মুখ, জানান— “আমরা চাই সবাই পরামর্শ দিন। ওয়েবসাইটে মতামত নেওয়ার ফর্ম চালু করেছি। মামলা এখনও চলছে। পাশাপাশি অভয়া ক্লিনিক স্থাপন, মুর্শিদাবাদের অশান্ত এলাকায় পৌঁছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো—এসব ভাবনায় আছে।”
পাশে সাধারণ মানুষ
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, সাড়ে ছ’হাজারের বেশি মানুষ ব্যক্তিগতভাবে অর্থ সাহায্য করেছেন। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ২৫০টিরও বেশি সংগঠন। বুধবারের গণকনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার পরিবারও। তাঁরা বলেন, “ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”
এই আন্দোলন শুধু চিকিৎসক সমাজের নয়, হয়ে উঠেছে রাজ্যের বিবেকের প্রতিচ্ছবি—যেখানে প্রশ্ন শুধু ন্যায়বিচার নয়, স্বচ্ছতা এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতারও।
মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ