আরজি করে খুন-ধর্ষণে অভিযুক্ত
কলকাতার শিয়ালদহ আদালতে গত ৪ নভেম্বর আরজি করে এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত একমাত্র অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়, এবং আগামী ১১ নভেম্বর থেকে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিচার প্রক্রিয়া চলবে প্রতিদিন।
গত ৯ আগস্ট ঘটনার সময়, কলকাতার আরজি করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার হল থেকে ওই মহিলা চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে একই রাতে কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাক থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শিয়ালদহ আদালতে চার্জ গঠনের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল নিশ্ছিদ্র, এবং ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ায় সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, প্রাথমিক চার্জশিটের ভিত্তিতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারই একমাত্র নামযুক্ত হয়েছেন। অন্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং প্ররোচনার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। ঘটনাটি সামনে আসার পর টালা থানার তৎকালীন ওসির ফোন কলও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চার্জ গঠনের সময়, অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, “আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।” তিনি আরও দাবি করেন যে, তাঁর বিভাগ তাঁকে চুপ থাকতে বলেছে। তাঁর এই বক্তব্যগুলি বিচারকের সামনে পেশ করা হবে।
সিবিআই ৭ অক্টোবর প্রথম চার্জশিট জমা দেয়, যেখানে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারই ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। চার্জশিটে ১১টি প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে সাক্ষী, ভিডিয়ো এবং ফরেন্সিক রিপোর্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়া, চার্জশিটে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের নামও রয়েছে। সিবিআই জানায়, গোটা ঘটনার পেছনে কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, এবং অন্য কেউ জড়িত কি না, সেই বিষয়েও তদন্ত চলছে।
এই ধরনের ঘটনা সমাজে একটি গভীর সংকট সৃষ্টি করে। নারীর বিরুদ্ধে অত্যাচার এবং ধর্ষণের ঘটনার পরিসংখ্যান ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে, যা শুধুমাত্র আইন ও বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই নয়, বরং সমাজের অঙ্গীকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এখন দেখার বিষয়, এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া কিভাবে এগোয় এবং কি রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আদালতের উপর মানুষের আস্থা বজায় রাখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ যে এই ধরনের ঘটনার সঠিক ও দ্রুত বিচার করা হয়। নারীদের সুরক্ষা এবং তাদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আজকাল অত্যন্ত স্পষ্ট।
এখন ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হতে চলা বিচার প্রক্রিয়ায় দেশবাসীর নজর থাকবে। সঠিক বিচার না হলে সমাজে নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা চলতেই থাকবে। এজন্য সঠিক আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজন, যা শুধু দোষীদের শাস্তি নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করবে।