আয়ুর্বেদে ফিরছে আস্থা!
ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার পাশাপাশি আয়ুর্বেদের প্রতি নতুন করে আগ্রহ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি ভরসা ফিরে এসেছে সাধারণ মানুষের। ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ, দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন সমাধান—সব ক্ষেত্রেই আয়ুর্বেদের দিকে ঝুঁকছে দেশের বড় অংশের মানুষ। ফলে কর্মক্ষেত্রেও বাড়ছে সুযোগ। কেন্দ্রের আয়ুষ মন্ত্রক এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের তরফে নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। তাই বহু ছাত্রছাত্রী এখন আয়ুর্বেদকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু আয়ুর্বেদ চিকিৎসক হওয়ার পথটি কী রকম? কোন কোন যোগ্যতা থাকা আবশ্যক? কোথায় পড়ানো হয়? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসক হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পেশায় প্রবেশের প্রথম ধাপ হল বিএএমএস (ব্যাচেলর অফ আয়ুর্বেদ মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি) ডিগ্রি। এটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের স্বীকৃত স্নাতক কোর্স।
এই ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রয়োজন—
- দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে থাকতে হবে।
- সাধারণত বোর্ড পরীক্ষায় ৫০–৬০ শতাংশ নম্বর পাওয়া আবশ্যক।
- এর পরে জাতীয় স্তরের NEET-UG পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
- মেধাতালিকা অনুযায়ী কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ তৈরি হয়।
বিএএমএস কোর্সের কাঠামো
বিএএমএস হল মোট সাড়ে পাঁচ বছরের ডিগ্রি কোর্স—
- সাড়ে চার বছর নিয়মিত তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক ক্লাস
- এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ
স্নাতক হওয়ার পরে ছাত্রছাত্রীদের—
- AYUSH মেডিক্যাল কাউন্সিল অথবা
- স্টেট আয়ুর্বেদিক কাউন্সিল–এর কাছে রেজিস্ট্রেশন করাতে হয়।
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে আয়ুর্বেদ চিকিৎসক হিসেবে স্বীকৃতি পান।
পশ্চিমবঙ্গে কোথায় বিএএমএস পড়ানো হয়
রাজ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিদ্যা পড়ানো হয়। উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি হল—
- জেবি রায় স্টেট আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কলকাতা
- রঘুনাথ আয়ুর্বেদিক মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতাল, মেদিনীপুর
- ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলকাতা
এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়ুর্বেদ বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও গবেষণা (পিএইচডি) কোর্স পড়ানো হয়।
কর্মক্ষেত্রে সুযোগ
বিএএমএস পাশের পরে চাকরির সুযোগ বিস্তৃত—
- সরকারি আয়ুর্বেদ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র
- বেসরকারি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা কেন্দ্র
- ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার, রিসার্চ অফিসার, ফার্মাসিস্ট পদ
- বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থায় প্রশাসনিক ও পরামর্শদাতা পদ
সবচেয়ে বড় কথা, চাইলে যে কোনও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক নিজস্ব চেম্বার খুলে স্বাধীন পেশা হিসেবে কাজ করতে পারেন।
কেন আয়ুর্বেদ এখন আবার জনপ্রিয়?
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনায় কম
- দীর্ঘমেয়াদি রোগে কার্যকর
- প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভরতা
- রোগের মূলে গিয়ে চিকিৎসা করার তত্ত্ব
শরীর-মন-আত্মা—এই তিনের সমন্বিত সুস্থতাকেই গুরুত্ব দেয় আয়ুর্বেদ। তাই এই চিকিৎসাপদ্ধতির প্রতি মানুষের আস্থা দিনে দিনে আরও বাড়ছে।
আপনি চাইলে বিএএমএস প্রস্তুতির বইয়ের তালিকা, ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় স্টেপ–বাই–স্টেপ গাইড, কিংবা ভারতের শ্রেষ্ঠ আয়ুর্বেদ কলেজগুলোর র্যাঙ্কিং–ও পেয়ে যেতে পারেন। জানাবেন, আমি তৈরিই আছি!

