আমেরিকার চাপে নত ভারত!
ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার দ্রুত প্রসার লাভ করছে, তবে দেশীয় উৎপাদকদের জন্য এটি যেন এক নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে—এমনটাই জানা গেছে সূত্র মারফত। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার সঙ্গে চুক্তির চাপেই ভারত সরকার এই নীতিগত পরিবর্তন আনতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে, মার্কিন বৈদ্যুতিক গাড়ি সংস্থা টেসলা এবং এর মালিক ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরে ভারতের উচ্চ শুল্ক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। মাস্ক বারবার বলেছেন, ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে হলে শুল্ক কমাতেই হবে।
এদিকে, ভারতের গাড়ি শিল্প এই সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, বিদেশি সংস্থাগুলিকে এত দ্রুত বাজারে ঢুকতে দিলে দেশীয় উৎপাদকরা মারাত্মক চাপে পড়বে।
শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত কেন?
ভারতে বর্তমানে বিদেশি বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানির উপর ১১০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত রয়েছে। দেশীয় সংস্থাগুলির দাবি ছিল, ২০২৯ সালের পর ধাপে ধাপে এই শুল্ক কমিয়ে ৩০% করা হোক। কিন্তু কেন্দ্র সেই অনুরোধে কর্ণপাত করেনি।
সরকারের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে ভারত কঠোর নীতিতে ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই পরিবর্তন আসবেই। তাই আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার আরও বড় করতে এই শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে, অনেকেই মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক-হুমকির সামনেই ভারত মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছে।
টেসলার জন্য ভারতের দরজা খুলছে?
টেসলার কর্ণধার ইলন মাস্ক বহুদিন ধরেই ভারতে বিনিয়োগ করতে চাইছিলেন। কিন্তু তিনি বরাবরই অভিযোগ করেছেন, ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির কারণে তার সংস্থা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।
এখন সরকার যদি শুল্ক কমিয়ে দেয়, তাহলে টেসলার জন্য ভারতের বাজার সহজ হয়ে যাবে। অনেকের মতে, এটি মূলত টেসলাকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই নেওয়া হচ্ছে। আর এর ফলে ভারতের দেশীয় সংস্থাগুলি চাপে পড়ে যাবে।
ভারতের গাড়ি শিল্প সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়াম (SIAM) এবং বিভিন্ন দেশীয় গাড়ি সংস্থা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার: বাস্তব চিত্র
গবেষণা সংস্থা FADA-র তথ্য অনুযায়ী,
🔹 ভারতে বর্তমানে মোট বিক্রি হওয়া গাড়ির মাত্র ১০%-১২% বৈদ্যুতিক গাড়ি।
🔹 কলকাতা-সহ বেশ কিছু শহরে এটি মাত্র ৩%-৪%।
অর্থাৎ, ভারতীয় ক্রেতারা এখনও পুরোপুরি বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে ঝুঁকেননি। এই অবস্থায় শুল্ক কমানোর ফলে বিদেশি সংস্থাগুলি সুবিধা পাবে, কিন্তু দেশীয় সংস্থাগুলির জন্য এটি হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দেশীয় সংস্থাগুলির আশঙ্কা কী?
ভারতের বহু দেশীয় গাড়ি সংস্থা বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে। তারা ধাপে ধাপে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছিল।
কিন্তু যদি টেসলা বা অন্যান্য মার্কিন সংস্থাগুলি শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিয়ে সহজেই ভারতের বাজার দখল করে নেয়, তাহলে দেশীয় কোম্পানিগুলির ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অনেকেই মনে করছেন,
✔ সরকার বিদেশি কোম্পানির স্বার্থরক্ষায় বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, অথচ দেশীয় শিল্পের কথা ভাবছে না।
✔ দেশীয় উৎপাদকদের রক্ষা করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
শুল্ক কমলে কী সুবিধা, কী অসুবিধা?
✅ সুবিধা:
✔ বিদেশি সংস্থাগুলির বিনিয়োগ বাড়বে।
✔ বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম কমবে, ফলে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসবে।
✔ দূষণ কমাতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়বে।
❌ অসুবিধা:
✘ দেশীয় গাড়ি শিল্পে বিদেশি প্রতিযোগিতার চাপ বাড়বে।
✘ দেশীয় সংস্থাগুলির বিনিয়োগে ধাক্কা লাগতে পারে।
✘ ভারতীয় অর্থনীতি আমদানি নির্ভর হয়ে পড়তে পারে।
এখন কী হতে পারে?
সরকার যদি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তাহলে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে বড় পরিবর্তন আসবে।
তবে দেশীয় সংস্থাগুলি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তারা চায়, শুল্ক হ্রাস ধাপে ধাপে হোক, যাতে ভারতীয় উৎপাদকদের প্রস্তুতির সময় পাওয়া যায়।
ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের উপর। এখন দেখার বিষয়—বিদেশি বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার শুল্ক কমাবে, নাকি দেশীয় শিল্পকে রক্ষার জন্য কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা নেবে?
ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!

