Monday, December 1, 2025

আমেরিকায় নজিরবিহীন সাইবার হানা! চীনা হ্যাকারদের ফাঁদে মার্কিন নাগরিক ও রাজনীতিবিদরা

Share

চীনা হ্যাকারদের ফাঁদে মার্কিন নাগরিক ও রাজনীতিবিদরা

আমেরিকার উপর নেমে এসেছে এক ভয়াবহ সাইবার হানার ছায়া। তদন্তে উঠে এসেছে, ‘সল্ট টাইফুন’ নামের একটি চীনা হ্যাকারগোষ্ঠী গোপনে দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলিকে নিশানা করেছে। শুধু আমেরিকাই নয়, প্রায় ৮০টি দেশে ছড়িয়েছে এই আক্রমণের প্রভাব। গোয়েন্দাদের দাবি, এমন নিখুঁতভাবে তারা কাজ চালিয়েছে যে আমেরিকার প্রায় প্রত্যেক নাগরিকের তথ্যই হয়তো এখন চীনের হাতে চলে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলির মূল নেটওয়ার্ক ভেদ করে চীন বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। এতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে হোয়াইট হাউসে। কারণ, এই তথ্য ব্যবহার করে চীনের গোয়েন্দারা শুধু সাধারণ নাগরিক নয়, বরং বিশ্বজুড়ে রাজনীতিবিদ ও কূটনৈতিক মহলের উপরও নজরদারি চালাতে পারে। এমনকি আমেরিকার সরকার, সামরিক খাত, পরিবহণ এবং আবাসন সংক্রান্ত সংস্থাগুলিও এই আক্রমণের বাইরে নেই।

তদন্তকারীদের দাবি, ‘সল্ট টাইফুন’ চীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদতপুষ্ট। ফলে বিষয়টি আর কেবল হ্যাকারদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, বরং একটি রাষ্ট্রীয় কৌশলের অঙ্গ। ২০১৯ সাল থেকে তারা সক্রিয়। এতদিনে আমেরিকার অন্তত ছয়টি বড় টেলিযোগাযোগ সংস্থার নেটওয়ার্কে ঢুকে ফোনালাপ, বার্তা এবং ব্যক্তিগত কথোপকথনের তথ্য সংগ্রহ করেছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, হ্যাকারদের হাত থেকে রেহাই পাননি আমেরিকার শীর্ষ রাজনীতিবিদরাও। জানা গিয়েছে, গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের কথোপকথনও হ্যাক করা হয়। শুধু রিপাবলিকান নয়, ডেমোক্র্যাট নেতাদেরও নজরে রেখেছিল তারা। এনক্রিপ্টেড না থাকা লিখিত কথোপকথনও সহজেই তাদের হাতে চলে গিয়েছে।

তদন্তকারীদের যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং স্পেন। ব্রিটিশ ও মার্কিন আধিকারিকরা এই হামলাকে “অসংযত” এবং “নির্বিচার” বলে উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারের যে প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, এই সাইবার হানা তারই স্পষ্ট নিদর্শন।

এর আগেও আমেরিকার সঙ্গে চীনের সাইবার সংঘাতের নজির রয়েছে। ২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসন অভিযোগ করেছিল, মাইক্রোসফ্‌টের ইমেল সার্ভার ব্যবহার করে চীন বিশ্বজুড়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। যদিও রুশ হ্যাকারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, তবে ‘সল্ট টাইফুন’-এর কৌশল এবং পরিসর বর্তমানে সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হোয়াইট হাউসের কাছে।

একটি বিষয় স্পষ্ট—এই সাইবার আক্রমণ শুধু প্রযুক্তিগত অনুপ্রবেশ নয়, বরং ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তির ভারসাম্য নাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তথ্যই আজকের দিনে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার, আর তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই পাল্টে দেওয়া যায় ক্ষমতার রূপরেখা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাই এটি কেবল একটি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নয়, বরং তাদের সার্বভৌমত্ব ও নেতৃত্বকে সরাসরি প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া এক সতর্ক সংকেত।

ওড়িশায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডির তল্লাশি, ১৩৯৬ কোটির প্রতারণা মামলায় উদ্ধার কোটি টাকার সম্পদ

Read more

Local News