আমেরিকায় দক্ষ কর্মীর আহ্বান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এইচ-১বি ভিসা ইস্যুতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকায় দক্ষ ও মেধাবী কর্মীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত তাঁর প্রশাসন। সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এই ভিসা-সংক্রান্ত মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প, যা এই ইস্যুতে চলমান বিতর্কে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ট্রাম্পের বক্তব্য: দক্ষতাই মূল মাপকাঠি
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ওপেন এআই-এর স্যাম অল্টম্যান, সফটব্যাঙ্কের মাসায়োশি সন, এবং ওরাকল-এর ল্যারি এলিসনের সঙ্গে বৈঠকের পর, এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের দেশে এমন মেধাবী মানুষ দরকার, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট। এমনকি, যাঁরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তাঁদের জন্যও আমাদের দরজা খোলা।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি এইচ-১বি ভিসা ব্যবস্থাটি খুব ভালোভাবে বুঝি। সুরা বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে দক্ষ পরিবেশক— প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের চাহিদা দক্ষ ও উপযুক্ত মানুষ। আমি চাই, সত্যিকারের যোগ্য ও কর্মদক্ষ ব্যক্তিরাই আমেরিকায় আসুন। এইচ-১বি ভিসা আমাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।”
এইচ-১বি ভিসার গুরুত্ব এবং বিতর্কের প্রেক্ষাপট
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসূত্রে যেতে হলে, বিশেষত প্রযুক্তি এবং বিশেষজ্ঞ ক্ষেত্রগুলিতে, এইচ-১বি ভিসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিসার আওতায় দক্ষ কর্মীরা ছয় বছরের জন্য আমেরিকায় থাকতে পারেন। প্রথম ধাপে এটি তিন বছরের জন্য মঞ্জুর করা হয় এবং পরে আরও তিন বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো যায়।
বর্তমানে এইচ-১বি ভিসাধারীদের মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশই ভারতীয়, যা স্পষ্টভাবে বোঝায় যে ভারত এই প্রক্রিয়ায় কতটা সক্রিয়। তবে ২০২০ সালে, ট্রাম্প প্রশাসন সাময়িকভাবে এইচ-১বি ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করেছিল। সেই সময় তিনি দাবি করেছিলেন, আমেরিকার চাকরির বাজার সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এবারের নির্বাচনের সময়ও তিনি বিদেশ থেকে কর্মী আনার বিষয়ে কঠোর মন্তব্য করেছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরায় শপথ নেওয়ার পর তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যে কিছুটা নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। তিনি সরাসরি দক্ষতা এবং যোগ্যতার ওপর জোর দিচ্ছেন।
নতুন নিয়ম এবং প্রশাসনিক আধুনিকীকরণ
ট্রাম্পের শপথগ্রহণের ঠিক আগে, আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এইচ-১বি ভিসার নিয়মে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। গত শুক্রবার থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একে ‘আধুনিকীকরণ’ বলা হলেও, এই পরিবর্তনগুলি অনেকটাই বিতর্কিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন নিয়মে যোগ্যতার মানদণ্ড এবং চাহিদার ওপর আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এই নিয়মগুলির উদ্দেশ্য মূলত এমন একটি কাঠামো তৈরি করা, যা বিদেশি কর্মীদের দক্ষতার মান যাচাই করবে এবং তাঁদের মধ্যে সেরা ব্যক্তিদেরই আমেরিকায় কাজের সুযোগ দেবে।
তবে কি বিতর্কের অবসান হবে?
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে ভিসা-সংক্রান্ত আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তিনি এখনো অভিবাসন নীতি নিয়ে তাঁর পূর্বের কঠোর অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে আসেননি। তবে দক্ষ এবং যোগ্য কর্মীদের ক্ষেত্রে তাঁর এই ইতিবাচক মনোভাব সাম্প্রতিক বিতর্কের মধ্যে ভারসাম্য আনতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এটি আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বৈত নীতির প্রকাশ। একদিকে তিনি দক্ষ কর্মীদের আহ্বান জানাচ্ছেন, অন্যদিকে এইচ-১বি ভিসার নিয়ম কঠোর করা হচ্ছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই মেধাবী কর্মীদের জন্য বাধা তৈরি করতে পারে।
ভারতীয়দের জন্য কী প্রভাব ফেলবে?
এইচ-১বি ভিসার ৭২ শতাংশ ভারতীয়দের দখলে থাকায়, নতুন নিয়ম এবং ট্রাম্পের মনোভাব ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিসার নিয়ম কঠোর হলে, ভারতীয় প্রযুক্তি পেশাজীবীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তবে ট্রাম্পের দক্ষ কর্মীদের স্বাগত জানানোর বার্তা আশার আলো দেখাচ্ছে।
ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং মেধাবী পেশাজীবীরা এখনো এই নীতির কার্যকারিতা ও বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করছেন।
উপসংহার
এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান দক্ষ কর্মীদের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে তাঁর প্রশাসনের কঠোর নীতির কারণে এটি কতটা সহজতর হবে, তা সময়ই বলে দেবে। দক্ষতা এবং মেধার স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বমঞ্চে আমেরিকাকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য যদি সফল হয়, তবে এই বিতর্কের সুরাহা হতে পারে।