রাখি গুলজারের জীবন থেকে কিছু স্মৃতি
মাঝেমধ্যে কোনো বিশেষ মানুষকে সামনে পেলে যেন নিজের অতীতের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। এমনই একজন মানুষ হলেন রাখি গুলজার। একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী, আর আজও জীবনকে নিজের শর্তে বাঁচা একজন শক্তিশালী নারী।
প্রথম সাক্ষাৎ
রাখি গুলজারের সঙ্গে প্রথম দেখা হল। একেবারে ঘরোয়া ভঙ্গিতে বললেন, “কোন মাছ ভাজতে গিয়ে হাত পুড়ল?” তাঁর সেই সহজ-সরল কথাতেই বোঝা গেল, তিনি ঠিক যেমন আন্তরিক, তেমনই বাস্তবিক। রাখি নিজে যেমন দুর্দান্ত অভিনেত্রী, তেমনি তাঁর রান্নার দক্ষতার গল্পও বিখ্যাত। গুলজার সাহেব পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে মাছ বাজার করা থেকে শুরু করে রান্নার খুঁটিনাটি শিখেছেন। রাখি হাসতে হাসতে বললেন, “পাবদা মাছ রাঁধার আগে ভালো করে জল ঝরিয়ে নাও, নাহলে তেল হাতে আসবে।”
জীবনের গল্প
১৯৭৪ সালে সম্পূরণ সিংহ কালরা, যিনি আমাদের গুলজার নামে পরিচিত, তাঁর সঙ্গে বিয়ে করেন রাখি। তবে, রাখি সবসময় নিজেকে ‘রাখি মজুমদার’ হিসেবেই পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। রাখি এবং গুলজারের মেয়ে মেঘনার নামের সঙ্গেও যোগ করা রয়েছে ‘গুলজার’।
কিন্তু বিয়ের পরেও রাখি নিজের পরিচিতি হারাননি। ছবি করার সময় তিনি নামের পাশে কোনো পদবি যোগ করেননি। যেমন ‘২৭ ডাউন’ ছবির টাইটেলে তাঁর নাম শুধুই রাখি। সেই নাম আজও তাঁর জন্য গর্বের।
সহজ জীবন, সরল পছন্দ
গোয়ার একটি পাঁচতারা হোটেলে দেখা হয়েছিল। বিশাল ঘর, দুর্দান্ত ব্যবস্থা—কিছুই তাঁকে তেমন আনন্দ দিল না। পরিচালকদের প্রতি তাঁর বিশেষ ভালোবাসা। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বটা যেন মা-ছেলের মতো। শর্ত ছিল, তাঁরা যেখানে থাকবেন, তাঁর ঘরও কাছাকাছি হতে হবে। এই আবদার তিনি একেবারে মনের অধিকারেই করেছেন।
রাখির খাবারের পছন্দও তেমনই সরল। ভাত খেতে খুব ভালোবাসেন। তবে কোনো নতুন খাবার দেখলে সেটি সাবধানে খেতে বলেন। যেমন, জেসমিন রাইস খাওয়ার সময় সতর্ক করে দেন, “এই ভাতে মারকারি থাকে, খেও না।”
স্মৃতির পথে
রাখি যখন পুরনো দিনের কথা বলছিলেন, তখন যেন সবাই মন দিয়ে শুনছিলেন। শশী কাপুরের সঙ্গে ‘কভি কভি’ ছবির শুটিংয়ের কথা বললেন। মেয়ে মেঘনার ছোটবেলার গল্পও উঠে এল। “অমিতাভ বচ্চনের বাচ্চারা সসেজ খাচ্ছিল, দেখে মেয়েকেও খাওয়াতে গিয়েছিলাম। মেয়ে ভয় পেয়ে ‘জুজু’ বলে পালাতে যাচ্ছিল।” এই ‘জুজু’ মানে ভয়।
তাঁর প্রিয় জায়গা তাঁর বাগানবাড়ি। সেখানে গরু ‘ধন্বো’ আছে। শোলের হেমা মালিনীর ঘোড়ার নামের মতোই। তাঁর বাগানে চিল-কাকেরা আসে, তাঁদের জন্য ডিম সেদ্ধ হয়। নিজের হাতে খাওয়ান। প্রকৃতি আর পোষ্যই তাঁর কাছে মানুষ থেকেও বেশি আপন।
সিনেমার দুনিয়া থেকে বিদায়
রাখি মনে করেন, এখনকার পরিচালকদের মধ্যে সৃজনশীলতার অভাব। সত্যেন বসু, যশ চোপড়ার মতো মানুষদের সঙ্গে কাজ করাই তাঁর সবচেয়ে বড় পাওয়া। তিনি বলেন, “যে দিন দেখলাম, আমার দ্বারা আর হচ্ছে না, সরে গেলাম।” তবে অভিনয় ছাড়লেও তিনি জীবনের প্রতি ভালোবাসা হারাননি।
রাখি গুলজার, একজন অনন্য মানুষ, যাঁর জীবন-দর্শন আমাদের প্রেরণা দেয়। তাঁর সরলতা, জীবনের প্রতি মমত্ববোধ, আর নিজের শর্তে বাঁচার শক্তি—সবই তাঁকে আমাদের কাছে আরও বেশি প্রিয় করে তোলে।