Friday, May 2, 2025

‘আমরা যোগ্য না অযোগ্য?’ মমতার বৈঠকে ঢোকার আগে ‘পাস’ বিতর্কে হুড়োহুড়ি, তর্ক-বিতর্কে উত্তাল চাকরিহারারা

Share

মমতার বৈঠকে ঢোকার আগে ‘পাস’ বিতর্কে হুড়োহুড়ি

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক। আশা ছিল, সমস্যার সুরাহার দিকে এগোবে আলোচনা। কিন্তু তার আগেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বাইরে চাকরি হারানো এসএসসি প্রার্থীদের মধ্যে দেখা গেল চরম বিভাজন— আর তার কেন্দ্রে রয়েছে একটি ছোট কাগজের টুকরো, যার নাম ‘পাস’।

সোমবার সকাল থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে নেতাজি ইন্ডোরের বাইরে। একদিকে ‘পাস’ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা চাকরিহারারা, অন্যদিকে তাঁদের পাশে প্রবেশাধিকারে বঞ্চিত আরও বহু বঞ্চিত মুখ। কেউ বলছেন, “পাস না থাকলে ঢুকতেই দেব না।” কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন— “এই পাস কাদের দেওয়া হয়েছে? কে ঠিক করল আমরা ‘যোগ্য’ না ‘অযোগ্য’?”

‘পাস’-এ লেখা রয়েছে— “আমরা যোগ্য”, নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা হরফে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ‘যোগ্য’ ঘোষণা করল কে? আর ‘অযোগ্য’ করলই বা কারা?

কলকাতা পুলিশের তরফে ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানান, “অনেকেই চলে এসেছেন। আমরা বিকল্প গেট দিয়ে তাঁদের ঢোকানোর চেষ্টা করছি। কারা পাস দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।” অর্থাৎ প্রশাসনের কাছেও এখনও পুরো বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

এই বিতর্কে সামনে উঠে এসেছে একটি সংগঠনের নাম— ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। তাদের দাবি, সরকারের তরফে তাঁদের হাতে ৭,৫০০টি পাস এসেছে। যাঁরা এই সংগঠনের হয়ে আদালতে মামলা করেছেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই বাছাই করে এই পাস দেওয়া হয়েছে।

তবে সংগঠনের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৫,৪০৩ জন প্রার্থী ‘যোগ্য’ হলেও, এই সীমিত সংখ্যক পাসের জন্য অনেকেই বাদ পড়ে গিয়েছেন। সেই কারণেই তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। জানা যাচ্ছে, রবিবার সন্ধেয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বার্তা দিয়ে ‘পাস’ সংগ্রহ করতে বলা হয়। সকালবেলা অনেকেই টোকেন দেখিয়ে পাস নিচ্ছিলেন।

কিন্তু যাঁরা ‘অযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত, তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা কোনও দোষ না করেও এখন বাইরের মানুষ। অনেকেই ভোরবেলা শহিদ মিনার এলাকায় এসে পাস নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ সংগঠনের। আবার, সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগ, কিছু ‘অযোগ্য’ চাকরিহারা জোর করে তাঁদের কাছ থেকে পাস কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

চাকরিহারাদের মনে প্রশ্ন জাগছে— এই বৈঠক কি তাঁদের সবার জন্য? নাকি শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের জন্য? পাস না পেলে কি তাঁদের কণ্ঠ পৌঁছবে না মুখ্যমন্ত্রীর কানে?

এই বিভাজনের ফলে মমতার বৈঠকের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। সমাধানের আলোচনায় যদি অংশ নিতে না পারেন বেশিরভাগ চাকরিহারা, তাহলে এই আলোচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?

যে মানুষগুলো গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে চলেছেন, আজ তাঁদের মধ্যে হাতাহাতি, তর্ক-বিতর্ক যেন আরও গভীর করে দিল এই যন্ত্রণাকে।

একটি বৈঠক যেন হয়ে উঠল আস্থা ও সম্মান ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ের নতুন মঞ্চ। পাস বিতর্ক এখন শুধু প্রবেশাধিকারের নয়— এটা হয়ে উঠেছে পরিচয়ের, ন্যায্যতার এবং স্বীকৃতির লড়াই।

রুই-কাতলার একঘেয়েমিতে বিরাম! স্বাদ বদল আনতে রান্না করুন ট্যাংরা মাছের ঝালঝালে তেল-ঝাল

Read more

Local News