আবাস যোজনায় ১২ হাজার পরিবারের জমি নেই!
লোকসভা নির্বাচন ২০২৪-এ তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ না দিলেও রাজ্য সরকারের তহবিল থেকেই বাংলার মানুষকে আবাস যোজনার টাকা দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরেই রাজ্য ১২ লক্ষ পরিবারের অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা (৬০ হাজার টাকা) পাঠিয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পে একটি বড় সমস্যা উঠে এসেছে— প্রায় ১২ হাজার পরিবার জমির অভাবে টাকা তুলতে পারছেন না বা বাড়ি বানাতে পারছেন না। এই সমস্যার সমাধানে এবার দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য।
জমিহীনদের জন্য সরকারের উদ্যোগ
জমি ছাড়া বাড়ি নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই ১২ হাজার পরিবারকে জমি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যেই জেলাগুলিকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন, ‘‘১২ লক্ষ পরিবারের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ এই সমস্যায় পড়েছেন। আমরা জেলাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছি তাঁদের জন্য দ্রুত বিকল্প জমি বরাদ্দ করতে।’’
জমির বন্দোবস্ত করার জন্য সরকারের নিজস্ব ‘খাস জমি’ থেকে জমি দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে বর্তমান বাসস্থানের কাছাকাছি জমি দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যাতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে নিজেদের জীবনযাপন করতে পারে।
সমীক্ষায় ত্রুটি, না কি পরিকল্পনার অংশ?
প্রশ্ন উঠেছে, জমি না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এই পরিবারগুলির অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ল? সমীক্ষার সময় কি কোনও ভুল হয়েছিল? মন্ত্রী এ বিষয়ে জানান, ‘‘সমীক্ষায় কোনও ত্রুটি হয়নি। এটি হতদরিদ্র মানুষের জন্য একটি মানবিক প্রকল্প। যাঁদের মাথার উপর ছাদ নেই, তাঁদের জন্যই সরকার জমি-সহ বিকল্প ব্যবস্থা করছে। এটি আমাদের সাফল্যের একটি অংশ।’’
তবে বিরোধীরা এই প্রকল্পের সমালোচনা করতে ছাড়েনি। তাঁদের বক্তব্য, এমন সমস্যা সরকারের নীতিগত ত্রুটির প্রতিফলন। তৃণমূলের মতে, এটি কোনও ত্রুটি নয়, বরং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ।
লোকসভার প্রতিশ্রুতি থেকে বাস্তবায়ন
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, রাজ্যের প্রতিটি পরিবারকে মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। পুজোর পর থেকেই রাজ্যজুড়ে আবাস যোজনার সমীক্ষা শুরু হয়। ২৮ লক্ষ আবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২ লক্ষ পরিবারকে টাকা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বাকি ১৬ লক্ষ পরিবারকেও এই সুবিধার আওতায় আনা হবে। যদি এই প্রকল্প সফল হয়, তাহলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২৮ লক্ষ পরিবার তাদের নতুন বাড়ি পাবে।
‘কাটমানি’-র সংস্কৃতি বন্ধে সচেতন নবান্ন
আবাস যোজনার টাকা নিয়ে যাতে কোনও ‘অবাঞ্ছিত’ ঘটনা না ঘটে, সেদিকে নজর রাখছে রাজ্য সরকার। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই প্রকল্পে অনেক বেশি স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। জেলাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কাটমানি নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে এবং বাড়ি তৈরির সামগ্রী নিয়ে উপভোক্তাদের ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি না করতে।
একজন সরকারি আধিকারিক জানান, ‘‘আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারে রাজ্য সরকার আরও বেশি সচেতন। এই কারণেই জমিহীন ১২ হাজার পরিবারকেও জমি দেওয়ার মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’’
শেষ কথা
বাংলার বাড়ি প্রকল্প রাজ্যের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে। যদিও কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবে সেগুলোর দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে সরকার। জমিহীন পরিবারগুলিকে জমি দিয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন একটি সাহসী পদক্ষেপ।
এই প্রকল্প শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণের উদাহরণ নয়, এটি একটি মানবিক উদ্যোগ। যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, এটি রাজ্যের দরিদ্র পরিবারগুলির জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মহাকুম্ভের ‘মোনালিসা’র খ্যাতি নিয়ে বিরক্তি! কেন বললেন, ‘দিনভর ছবি তুলতে ব্যস্ত’?