মুখোমুখি মমতা-শুভেন্দু!
বঙ্গ রাজনীতির দ্বৈরথে আবার বদল। দীর্ঘদিন ধরে যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর টক্কর ছিল কেন্দ্রবিন্দু, সেখানে এবার সরাসরি মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে মমতা সাধারণত শুভেন্দুর মন্তব্য এড়িয়ে গেছেন, বরং শুভেন্দুর প্রত্যেকটি অভিযোগের জবাব দিতেন অভিষেক। তবে সেই চিত্র এখন বদলে গিয়েছে। অভিষেক যেন কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছেন, আর তাতে সুযোগ পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
মুখ্যমন্ত্রীর ৮৫ মিনিটের ভাষণ, ৭০ শতাংশই শুভেন্দুকে জবাব
বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তৃতায় ৮৫ মিনিটের ভাষণ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জুড়ে ছিল শুভেন্দুর বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, এতে শুভেন্দুকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছেন মমতা। তবে তৃণমূলের অন্য একটি অংশ মনে করছে, শুভেন্দুর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীকে এতটাই ক্ষুব্ধ করেছে যে তিনি সরাসরি আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন।
অভিষেক কেন সরে গেলেন?
গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য রাজনীতিতে একটা দৃশ্যমান চিত্র ছিল—
✅ শুভেন্দু যা বলতেন, তার তীব্র জবাব দিতেন অভিষেক।
✅ মমতা বরং শুভেন্দুকে ‘উপেক্ষা’ করার নীতি নিয়েছিলেন।
✅ একসময় তিনি বলেছিলেন, “শুভেন্দুর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নিতে হলে ব্লক সভাপতিদের জিজ্ঞাসা করুন!”
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অভিষেক রাজনীতির মূল কৌশলগত দিক থেকে কিছুটা সরে গিয়েছেন। এখন তিনি বেশি ব্যস্ত ডায়মন্ড হারবারের ‘সেবাশ্রয়’ প্রকল্প নিয়ে। রাজনৈতিক ভাষায় বললে, অভিষেক ‘ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ’ থেকে ‘ডিপ ফাইন লেগে’ সরে গিয়েছেন। শুভেন্দুর ঘাড়ের কাছে ‘হেডলাইট’ রেখে যিনি ব্যাটিং করছিলেন, তিনি আর সেই জায়গায় নেই। ফলে মমতাকে নিজেই ফ্রন্টফুটে এসে খেলতে হচ্ছে।
শুভেন্দুর ‘জঙ্গি যোগ’ অভিযোগেই কি এত প্রতিক্রিয়া?
গত সোমবার বিধানসভায় শুভেন্দু অভিযোগ করেছিলেন, “মমতার সঙ্গে কাশ্মীরি জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী সেই অভিযোগকে একেবারে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মমতা বলেছেন, যদি শুভেন্দুর অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি এক মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়বেন।
পাল্টা শুভেন্দু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি লেখার কথা ঘোষণা করেন, কারণ তাঁর দাবি মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ‘হুমকি’ দিয়েছেন।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, টক্কর এখন সমানে-সমানে।
শুভেন্দুর জন্য কি ‘ফাঁকা মাঠ’ তৈরি হয়েছে?
রাজনীতির ময়দানে একা মাঠ পেয়ে গেলে যে কেউই সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায়। এতদিন শুভেন্দুর প্রতিটি বক্তব্যের সরাসরি জবাব দিতেন অভিষেক, কিন্তু অভিষেকের ব্যস্ততা কমতেই শুভেন্দুর আক্রমণ যেন আরও প্রবল হয়েছে। মমতা নিজে এবার তার জবাব দিচ্ছেন, কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এতে শুভেন্দুর রাজনৈতিক গুরুত্ব অনিচ্ছাকৃতভাবেই বেড়ে যাচ্ছে।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেছেন,
📌 “শুভেন্দু এতদিন ফাঁকা মাঠ পেয়ে যাচ্ছিলেন। এবার দিদি নিজে ব্লকার হয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন।”
কিন্তু এতে রাজনৈতিকভাবে শুভেন্দুর শক্তি কমছে নাকি বরং তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
তৃণমূলে বার্তা স্পষ্ট— শেষ কথা মমতারই
গত কয়েক মাসে মমতা একাধিকবার দলের সাংগঠনিক দিক নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে বার্তা দিয়েছেন। তিনি সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে দলের রণনীতি— সবই নিজেই ঠিক করছেন।
এখন বিরোধী দলনেতাকে জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি নিজে ফ্রন্টফুটে খেলতে নামলেন। এর মাধ্যমে হয়তো তিনি বোঝাতে চাইছেন,
📌 “শেষ কথা আমিই বলব, অন্য কেউ নয়।”
রাজনীতির নতুন ময়দান: মমতা বনাম শুভেন্দু
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,
📌 আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই লড়াই আরও জমবে।
📌 অভিষেক আপাতত ব্যাকফুটে, তাই মমতা বনাম শুভেন্দুর দ্বৈরথই এখন মূল আকর্ষণ।
📌 তৃণমূল যদি ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করতে না পারে, তাহলে অভিষেককে সামনে আনার বিষয়েও নতুন করে ভাববে দল।
সুতরাং, রাজনীতির খেলা বদলাচ্ছে, নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে এটা স্পষ্ট— বঙ্গ রাজনীতির আসল দ্বৈরথ এখন শুভেন্দু অধিকারী বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?