চাকরি হারানো শিক্ষকদের ক্ষোভ, কী বলছেন মামলাকারীরা?
পশ্চিমবঙ্গে এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর চাকরি হারানো প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা আজ দিশেহারা। অনেকে বলছেন, যদি কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী আদালতে না যেতেন, তাহলে এই পরিণতি হতো না।
এদিকে, যাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, তাঁরা বলছেন, তাঁদের লড়াই ছিল ন্যায্য চাকরির দাবিতে, কাউকে পথে বসানোর জন্য নয়। তবু চাকরি হারানোদের একাংশ মনে করছেন, মামলা না হলে তাঁদের জীবনে এই দুর্দিন আসত না।
মামলাকারীদের বিরুদ্ধে চাকরিহারা শিক্ষকদের ক্ষোভ
যাঁরা এতদিন শিক্ষকতার কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, কিছু মামলাকারীর কারণে তাঁদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। অনেক জায়গায় মামলাকারীদের একঘরে করা হচ্ছে, কেউ কেউ ফোনে পর্যন্ত কথা বলছেন না।
একজন চাকরি হারানো শিক্ষক বলেন,
👉 “যদি ওরা মামলা না করত, তাহলে আজ আমরা বেকার হয়ে রাস্তায় দাঁড়াতাম না।”
কিন্তু মামলাকারীরা বলছেন,
👉 “আমরা ন্যায্যতার জন্য লড়াই করেছি, অন্যায়ভাবে চাকরি নেওয়ার জন্য নয়!”
মামলাকারীদের প্রতিক্রিয়া: “আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েছি”
২০১৬ সালে এসএসসি-তে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে প্রথম মামলা হয়। অভিযোগ ছিল, যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অনেকে অন্যায়ভাবে চাকরি পেয়েছেন।
✅ নন্দীগ্রামের লক্ষ্মী তুঙ্গা বলছেন:
➡️ “আমি কারও চাকরি খাওয়ার জন্য মামলা করিনি। আমি আমার নিজের ন্যায্য চাকরির জন্য লড়েছি।”
➡️ “যাঁরা যোগ্য ছিলেন, তাঁরা কেন তখন প্রতিবাদ করেননি?”
✅ হুগলির নাসরিন খাতুন বলছেন:
➡️ “আমরা বঞ্চিত ছিলাম, তাই আদালতে গিয়েছিলাম। আমাদেরও তো চাকরি পাওয়া উচিত ছিল!”
➡️ “যখন আমরা আন্দোলন করছিলাম, তখন তো আমাদের পাশে কেউ দাঁড়াননি। উল্টো আমাদের অপমান করা হয়েছিল।”
✅ কোচবিহারের ববিতা সরকার বলছেন:
➡️ “এই মামলা না হলে কেউ জানতই না, সাদা খাতায়ও চাকরি হয়!”
➡️ “যাঁরা অন্যায় মেনে নিয়েছিলেন, তাঁরাও দোষী। তাঁদের উচিত ছিল প্রতিবাদ করা।”
দুর্নীতির শুরু কোথায়?
📌 ২০১৬ সালে এসএসসি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
📌 ২০১৮ সালে চূড়ান্ত প্যানেল প্রকাশিত হয়।
📌 ২০২১ সালে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং হাই কোর্ট তদন্তের নির্দেশ দেয়।
📌 সিবিআই তদন্তে নিয়োগ দুর্নীতির প্রমাণ মেলে।
📌 ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, পুরো প্রক্রিয়া অবৈধ এবং ২৫,৭৫২ জনের চাকরি বাতিল হয়।
এখন কী হবে?
চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাইছেন, রাজ্য সরকার যেন নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে মামলাকারীরা বলছেন,
👉 “আমরা লড়েছি ন্যায়ের জন্য। কিন্তু এই দুর্নীতির দায় আমাদের নয়, বরং যাঁরা অন্যায়ভাবে চাকরি নিয়েছেন, তাঁদেরই এই পরিণতির জন্য দায়ী করা উচিত।”
আগামী দিনে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আরও আইনি লড়াই হতে পারে, তবে আপাতত চাকরি হারানো হাজার হাজার শিক্ষক রাস্তায় বসে আছেন, আর যাঁরা মামলা করেছিলেন, তাঁরা সামাজিকভাবে চাপে পড়েছেন।
ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!