Monday, December 1, 2025

“আপনারাই পিওকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, আমরা ফিরিয়ে আনব” — রাজ্যসভায় কংগ্রেসকে কটাক্ষ অমিত শাহের

Share

রাজ্যসভায় কংগ্রেসকে কটাক্ষ অমিত শাহের!

রাজ্যসভায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে চলা উত্তপ্ত বিতর্কে যখন দেশের নিরাপত্তা এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল কেন্দ্রবিন্দুতে, তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর বক্তব্যে রাজনৈতিক বার্তা দিতে ছাড়েননি। দেশের সামরিক সাফল্যের পাশাপাশি তিনি কংগ্রেসকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নাম টেনে অতীতের ভুল তুলে ধরেন।

অমিত শাহ বলেন, “আপনারা (কংগ্রেস) পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) দিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা সেটা ফিরিয়ে আনব।” তাঁর দাবি, নেহরুর সিদ্ধান্তের কারণেই ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরের একটি বড় অংশ পাকিস্তানের হাতে চলে যায়। এই মন্তব্যের মাধ্যমে শাহ একদিকে যেমন বিজেপির আগ্রাসী অবস্থান তুলে ধরেছেন, তেমনই কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন অতীত সরকারের দিকেও তীব্র ইঙ্গিত করেছেন।

শাহ এ দিন বলেন, “পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের পরিবারের অনেকেই চাইছিলেন, সন্ত্রাসবাদীদের গুলি করে মারা হোক। ‘অপারেশন মহাদেব’-এ সেটাই হয়েছে।” প্রসঙ্গত, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন সন্ত্রাসবাদী — হাসিম মুসা, জিবরান এবং হামজা আফগানি — শ্রীনগরের কাছে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়। এই ঘটনাকে অনেকে ‘কাকতালীয়’ বলে উল্লেখ করলেও, শাহ জানিয়ে দেন, “ওদের আরও কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখা উচিত ছিল?” তাঁর কণ্ঠে ছিল কঠোর প্রতিশোধের সুর।

বিরোধী সাংসদ পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ ‘অপারেশন মহাদেব’ নাম নিয়ে প্রশ্ন তুললে শাহ ইতিহাসের দিকেই ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, “ছত্রপতি শিবাজির সেনারা যখন শত্রুকে নিধন করতেন, তখন ‘হর হর মহাদেব’ ধ্বনি দিতেন। সেই ঐতিহ্যের কথা ভুলে গেলে চলবে না।”

এখানেই থেমে থাকেননি অমিত শাহ। তিনি কংগ্রেস পরিচালিত রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে ২০০০-০৬ সাল পর্যন্ত চীনের কাছ থেকে অনুদান নেওয়ার অভিযোগও তোলেন। যদিও মোদী সরকারের আমলে বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের পুত্র পরিচালিত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সংস্থার বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল, তা নিয়ে এদিন চুপ ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এছাড়াও, সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শাহ। তাঁর অভিযোগ, “নেহরুর সময় পাকিস্তানকে ৮০ শতাংশ জল দেওয়ার চুক্তি করা হয়েছিল। আমরা এমন অন্যায় সিদ্ধান্ত কখনও নেব না।”

চীনের সরাসরি নাম না নিলেও, শাহ ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন যে ভারত পাকিস্তানকে যেভাবে প্রতিহত করছে, তাতে বাইরের কোনো সাহায্য বা হুমকি ভারতকে দমাতে পারবে না। তবে এই প্রসঙ্গে মোদীর বক্তব্যে চীনের নাম না থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

সব মিলিয়ে, অমিত শাহের বক্তব্যে স্পষ্ট — ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুধু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি সেনা অভিযান নয়, এটি একটি রাজনৈতিক অস্ত্রও। এর মাধ্যমে বিজেপি নিজেদের কঠোর প্রতিরক্ষা নীতি তুলে ধরছে এবং একইসঙ্গে কংগ্রেসকে ইতিহাসের দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পিওকে ফেরত আনার দাবি কেবলমাত্র কটাক্ষ নয়, বরং তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক কৌশলের ইঙ্গিত হতে পারে। তবে বাস্তবতার নিরিখে সেই দাবি কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে।

অলিম্পিক্স ক্রিকেটে বাদ পড়ার শঙ্কায় পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড, আইসিসি নিয়ম নিয়ে দুই দেশের ক্ষোভ

Read more

Local News