আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন মাহমুদুল্লা!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরও একটি বড় ধাক্কা। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদুল্লা রিয়াদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন বার্তায় তিনি এই ঘোষণা দেন। এর আগে মুশফিকুর রহিম একদিনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। এবার মাহমুদুল্লার অবসরের খবরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্মের আরেকটি অধ্যায় শেষ হতে চলেছে।
সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন বার্তা
৩৯ বছর বয়সী মাহমুদুল্লা তার অবসরের ঘোষণা দিয়ে লিখেছেন, “সবকিছুরই একটা শেষ আছে, আর সেটা মেনে নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ, শান্তি পেলাম।” তার এই বার্তায় অনুরাগীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই তার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় মুহূর্তগুলোকে স্মরণ করছেন, আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন— এত দ্রুত কি অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ব্যর্থতা ও সমালোচনা
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। মুশফিকুর রহিম আগেই ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছিলেন, এবার মাহমুদুল্লাও ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। এই দুই ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স নিয়ে টুর্নামেন্টের সময়ই তীব্র আলোচনা চলছিল।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি যুগের ইতি?
বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাহমুদুল্লা ছিলেন ‘পঞ্চপাণ্ডব’-এর অন্যতম। মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং তামিম ইকবাল আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। সাকিব আল হাসান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশের হয়ে খেলতে পারছেন না। মুশফিকুর রহিম শুধু টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন। এখন মাহমুদুল্লার অবসরের ফলে সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সোনালি যুগের প্রতিনিধিত্ব প্রায় শেষ হয়ে গেল।
গৌরবময় ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তি
২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করেছিলেন মাহমুদুল্লা। দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি বাংলাদেশকে অনেক স্মরণীয় জয় উপহার দিয়েছেন।
- ওয়ানডে ক্যারিয়ার: ২৩৯ ম্যাচে ৫৬৮৯ রান, গড় ৩৬.৪৬, ৪টি শতরান, ৩২টি অর্ধশতরান।
- টেস্ট ক্যারিয়ার: ৫০ ম্যাচে ২৯১৪ রান, গড় ৩৩.৪৯।
- টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার: ১৪১ ম্যাচে ২১২২ রান।
- নেতৃত্ব: ৬টি টেস্ট ও ৪৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ভবিষ্যতে কী করবেন মাহমুদুল্লা?
অবসরের পর মাহমুদুল্লা কী করবেন, তা নিয়ে এখনো কিছু জানাননি। তবে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কোচিং বা ধারাভাষ্যের জগতে তার প্রবেশের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে। বিসিবি তাকে কোনো ভূমিকা দিতে পারে কিনা, সেটাও দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সামনে চ্যালেঞ্জ
সিনিয়রদের বিদায়ের পর এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ওপর বড় দায়িত্ব আসবে। নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটাররা কতটা দক্ষতার সঙ্গে এই শূন্যতা পূরণ করতে পারবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
মাহমুদুল্লার বিদায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি যুগের সমাপ্তি ঘোষণা করল। তার অবদান কখনোই ভোলার নয়। বিদায় মাহমুদুল্লা, তোমার স্মরণীয় ইনিংসগুলো বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরকাল অমলিন থাকবে।

