আদানি প্রসঙ্গে আলোচনা
আগামী সোমবার থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতে চলেছে, এবং এই অধিবেশন শুরুর আগেই আদানি গোষ্ঠী নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠতে পারে। কংগ্রেস সাংসদ মণিকম টেগোর লোকসভায় আদানি নিয়ে আলোচনা চেয়ে একটি মুলতুবি প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি লোকসভার স্পিকার এবং সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছেন, যেখানে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে উঠতে থাকা অভিযোগগুলির প্রসঙ্গে সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মণিকম টেগোর তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, আমেরিকার আদালতে আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ দিয়ে বরাত পাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা আদানি গোষ্ঠীর উপর একটি বড় ধরনের কালো মেঘের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ অনুসারে, সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে সৌরশক্তির বড় চুক্তি হস্তগত করতে ২৬ কোটি ডলারেরও বেশি ঘুষ দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস সাংসদের মতে, এই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতা বিশ্বের সামনে ভারতের সম্মানকে সংকটে ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে জবাব দিতে হবে। আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের সখ্য এবং এই ধরনের কেলেঙ্কারিতে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে সংসদে তুলে ধরা প্রয়োজন।” কংগ্রেস মনে করছে, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগগুলো ভারত সরকারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক অপমান হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে এবং এর বিরোধিতা করার জন্য সংসদে আলোচনা বাধ্যতামূলক।
এদিন সকালে কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে দলের “রণকৌশল” নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। সোমবার অধিবেশন শুরু হলেও সাধারণত প্রথম দিন কিছু বড় আলোচনা হয় না, তবে মঙ্গলবার থেকে আদানি প্রসঙ্গ নিয়ে সংসদ উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সরকারি পক্ষকে চাপ দেওয়া হবে এবং আদানি সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন তোলা হবে।
এছাড়াও, মণিপুরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে অশান্তি এবং ওয়াকফ বিল নিয়ে বিতর্কের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়গুলোর উপরও বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিতে পারে। তবে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বিজেপিকে কিছুটা আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, যেখানে বিজেপি-শিবসেনা (শিন্ডে)-এনসিপি জোট বিপুল জয় পেয়েছে।
এদিকে, শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে সরকারের তরফে বিরোধীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা তৈরি করতে হলে সংসদে এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা উচিত। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন এবং আদানি কেলেঙ্কারি, মণিপুর পরিস্থিতি, ওয়াকফ বিল ইত্যাদি নিয়ে সংসদে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন তুলবেন।
সংসদের এই অধিবেশনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের ‘রণকৌশল’ ঠিক করতে সাংসদের বৈঠক আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কীভাবে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করা যায় এবং কোন বিষয়গুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি আওয়াজ তোলা উচিত।
অধিবেশন শুরু হতেই দেখা যাবে, কংগ্রেসসহ বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে সোচ্চার হতে পারে, আর একদিকে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি সত্ত্বেও বিরোধীরা তাদের অবস্থান অটুট রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।