Monday, December 1, 2025

আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় অভিযুক্তের ইন্ধন প্রমাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

Share

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার বিচার করতে হলে অভিযুক্তের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উস্কানি প্রমাণ করা জরুরি। সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার মহারাষ্ট্রের একটি মামলায় এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। মামলাটি এমন এক সময়ে সামনে এসেছে, যখন বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অতুল সুভাষের আত্মহত্যার ঘটনাকে ঘিরে সারা দেশে তোলপাড় চলছে।

মহারাষ্ট্রের এক তরুণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তাঁরা স্ত্রীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন। পুলিশ তরুণ, তাঁর বাবা, এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। অভিযুক্তরা প্রথমে নিম্ন আদালতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানান। তা খারিজ হয়ে গেলে, তাঁরা বম্বে হাই কোর্টে যান। সেখানেও রেহাই না পেয়ে, তাঁরা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন।

শুক্রবার বিচারপতি বি.আর. গভই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে মামলাটি শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্তদের মামলা থেকে মুক্তি দিয়েছে। সেইসঙ্গে জানিয়েছে, আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা তখনই টিকবে, যখন অভিযুক্তের কোনও স্পষ্ট উস্কানি বা হেনস্থার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

উস্কানির সময়কাল এবং প্রমাণের গুরুত্ব

আদালত আরও বলেছে, অভিযুক্তের উস্কানি আত্মহত্যার ঘটনার কতদিন আগে দেওয়া হয়েছিল, সেটাও বিবেচ্য। দু’টি ঘটনার মধ্যে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান থাকলে তা মামলার ভিত্তি দুর্বল করতে পারে। মহারাষ্ট্রের এই বিশেষ মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও স্পষ্ট বা বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা খারিজ করা হয়।

বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অতুলের আত্মহত্যার বিতর্ক

সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অতুল সুভাষের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অতুল তাঁর ২৪ পাতার সুইসাইড নোট এবং দেড় ঘণ্টার একটি ভিডিয়োতে স্ত্রী নিকিতা সিংহানিয়া এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হন।

অতুলের পরিবারের দাবি অনুযায়ী, এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অতুল চরম সিদ্ধান্ত নেন। বেঙ্গালুরু পুলিশ ইতিমধ্যেই অতুলের স্ত্রী, তাঁর মা, এবং ভাইকে গ্রেফতার করেছে।

অতুলের মৃত্যুর পর আরও একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর চার বছরের ছেলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অতুলের মা ওই শিশুকে নিজের কাছে রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন। তবে শিশুটি বর্তমানে কোথায় রয়েছে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য নেই।

সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ

শীর্ষ আদালত উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, এবং কর্নাটক সরকারের কাছে নোটিস পাঠিয়ে শিশুটির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। অতুলের মায়ের অভিযোগ, শিশুটিকে কোথায় রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও তথ্য তাঁদের পরিবারের কাউকে দেওয়া হয়নি।

আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার ভবিষ্যৎ বিচারধারা

সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতে আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার বিচারধারায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ধরনের মামলায় অভিযুক্তের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইন্ধন প্রমাণিত না হলে, তা খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। একই সঙ্গে, প্রমাণের সময়কাল এবং ঘটনার পারস্পরিক সম্পর্ক বিচার করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

অতুলের মতো মর্মান্তিক ঘটনা সমাজে আত্মহত্যার কারণ এবং প্রতিকারের উপায় নিয়ে আরও গভীর আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।

Read more

Local News