Sunday, May 4, 2025

আখের খেতের তলায় সোনার খনি, লোভের ফাঁদে ধ্বংস এক প্রাচীন সভ্যতা!

Share

আখের খেতের তলায় সোনার খনি!

কলম্বিয়ার পালমিরা অঞ্চলের হ্যাসিন্ডা মালাগানায় এক আখচাষি হঠাৎই যেন ভাগ্য বদলের চাবিকাঠি খুঁজে পেলেন। ১৯৯২ সালের এক দিনে, খেতে ট্র্যাক্টর চালাতে চালাতে মাটি ধসে যান তিনি। চোট-আঘাত সামলে উঠে যখন চোখ মেলে দেখলেন, তখন চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র সোনালি ঝলক। প্রথমে অবাক হলেও ধীরে ধীরে বুঝে যান— এ শুধু সোনা নয়, যেন কুবেরের ভাণ্ডার!

সেই শ্রমিক ঠিক করেন, কাউকে না জানিয়ে এই গুপ্তধনের মালিক হবেন তিনি নিজেই। বাড়িতে লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন সোনার মূর্তি, পাত, অলংকার। কিন্তু যে খনিটি তিনি খুঁজে পেয়েছেন, তা কেবল সোনার ভাণ্ডার নয়— বরং একটি প্রাচীন সভ্যতার সমাধিস্থল, হাইপোজ়িয়াম। এই জায়গাগুলি প্রাচীন কালে ধর্মীয় আচার, সমাধি এবং উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হত।

কিন্তু যতই লুকোনোর চেষ্টা হোক, খবরটা বেশিদিন গোপন থাকল না। ‘আখের খেতে সোনা পাওয়া গেছে!’— এই খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল গোটা এলাকায়। কয়েক দিনের মধ্যেই সেখানে হাজির হয় পাঁচ হাজারেরও বেশি লুটেরা। তারা মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে নেয় অমূল্য নিদর্শন। পুলিশ ও সেনা এলেও রোখা যায়নি এই দৌরাত্ম্য।

কয়েক মাসের মধ্যে মালাগানার সেই সমাধিস্থল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। শত শত সমাধি লোপাট হয়ে যায় চোখের নিমেষে। একটি খুনের ঘটনাও ঘটেছিল বলে জানা যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা যখন গবেষণা শুরু করলেন, তখন ততক্ষণে বহু মূল্যবান নিদর্শন হাতছাড়া। জানা যায়, সমাধিতে খাঁটি সোনার তৈরি মুখোশ, মূর্তি, অলংকার, পান্না খচিত মালা— সবই ছিল। কিছু মূর্তির ওজন ছিল ১৬০ কেজির বেশি!

প্রায় ৫০ কোটি পেসো খরচ করে পরে কিছু নিদর্শন উদ্ধার করতে পারে সরকার। ১৫০টি সোনার জিনিসপত্র স্থান পেয়েছে বোগোটার বিখ্যাত ‘মিউজিও দেল ওরো’ জাদুঘরে। একটি বিশেষ মুখোশে তিনটি সোনার পাত, গলায় সোনার পুঁতির মালা, পায়ের ওপর সোনার পাতের মুখোশ— এমন অজস্র নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়।

যেটুকু খননকাজ সম্ভব হয়েছিল, তাতে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা জানতে পারেন, এই সভ্যতার নাম ছিল ‘মালাগানা-সোনসয়েড’। ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তারা এই এলাকায় বসবাস করত। তারা সোনা, রুপা, সিরামিক ও বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। তাদের নির্মাণশৈলী এতটাই সূক্ষ্ম ছিল যে আজকের গবেষকরাও বিস্মিত।

তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই সভ্যতা সম্পর্কে পুরো সত্য জানা আর সম্ভব নয়— লোভের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ইতিহাসের অমূল্য অধ্যায়টি। একটা মাত্র খামারের নিচে লুকিয়ে ছিল এক বিস্ময়কর সভ্যতা। কিন্তু অজ্ঞতা আর লোভ মিলে সেটিকে ইতিহাসের অন্ধকারে হারিয়ে দিল।

এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়— প্রতিটি মাটির তলায় ইতিহাস লুকিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সেই ইতিহাসের সম্মান না রাখলে, সোনা দিয়ে তৈরি হলেও, তা আমাদের কিছুই দিতে পারে না। বরং কেড়ে নেয় চিরদিনের মতো একটি জাতির গল্প।

স্ট্রেস কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে মাসাজ, তবে সাবধানে নিতে হবে এই সিদ্ধান্ত

Read more

Local News