আইপিএলের মাঝেই দল ছেড়ে পুরনো পেশায় বরুণ!
ক্রিকেট মাঠে তাঁর ঘূর্ণিতে ব্যাটসম্যানরা কুপোকাত। কিন্তু মাঠের বাইরে বরুণ চক্রবর্তী যেন আর এক মানুষ—গায়ে হেলমেট, হাতে নকশার খাতা, আর সামনে নির্মাণাধীন বাড়ি। আইপিএলের ব্যস্ত সূচির মাঝেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই রহস্য স্পিনার হঠাৎ পাড়ি দিলেন চেন্নাইয়ে, একজন পুরনো মক্কেলের অনুরোধে একটি নির্মাণকাজ নিজে পরিদর্শন করতে।
অনেকেই জানেন না, ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার আগেও বরুণ একজন পেশাদার স্থপতি ছিলেন। তামিলনাড়ুর এই ক্রিকেটার এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় পাঁচ বছরের কোর্স শেষ করে দুই বছর কাজও করেছেন এই পেশায়। তবে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা এতটাই গভীর ছিল যে, শেষ পর্যন্ত স্থপতির ডেস্ক ছেড়ে হাতে তুলে নেন ক্রিকেট বল।
তবে পুরনো পেশার সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করেননি বরুণ। এখনও তাঁর কিছু ক্লায়েন্ট রয়েছেন যাঁদের প্রজেক্টে সময় সুযোগ মতো নজর দেন তিনি। এমনই এক মক্কেলের অনুরোধে শনিবার চেন্নাইয়ে গিয়ে একটি নির্মাণকাজ ঘুরে দেখেন বরুণ। সেই মুহূর্তের ছবি নিজেই শেয়ার করেছেন নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে— যেখানে তাঁকে দেখা যাচ্ছে নির্মাণস্থলে হেলমেট পরে, একেবারে প্রকল্প তদারকির ভূমিকায়।
তাহলে কি আইপিএল চলাকালীন এই বিরতি পাওয়া গেল কীভাবে?
আসলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের রোববার লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে ইডেন গার্ডেন্সে খেলার কথা ছিল। কিন্তু রামনবমীর কারণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় ম্যাচটি পিছিয়ে মঙ্গলবার করা হয়েছে। ফলে বরুণ ও কেকেআর শিবির হাতে দু’দিন অতিরিক্ত সময় পেয়ে যায়। এই অবসরে বরুণ ফিরে গেলেন তাঁর অন্য ভালোবাসার কাছে—স্থাপত্যে।
কয়েক দিন আগে একটি সাক্ষাৎকারে বরুণ বলেছিলেন, “স্থাপত্য আমার প্রথম ভালবাসা ছিল। পাঁচ বছরের পড়াশোনা, সেই সময়ের দিনগুলো একেবারে আলাদা জগতের। তখন ক্রিকেট দেখতামও না ঠিকঠাক। কিন্তু মনের ভিতরে কোথাও একটা জায়গা ছিল ক্রিকেটের জন্য। তাই স্থপতি হিসেবে কাজ করার পরও মাঠের টান কাটাতে পারিনি।”
তিনি আরও জানান, “পরীক্ষার সময় বাড়ির নকশা আঁকতাম আর ক্রিকেট ব্যাটের মতো কিছু একটা বসিয়ে দিতাম কোথাও না কোথাও! পড়াশোনা শেষ করে যখন ১০ মাস কিছু করছিলাম না, তখন ভাবতে লাগলাম—আসলে আমি কী করতে চাই? তখনই আবার বল হাতে তুলে নিই।”
এই বছরের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত বরুণ কেকেআরের সফলতম বোলার। চারটি ম্যাচে ছয় উইকেট নিয়ে দলের ভরসার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। তাঁর এই দ্বৈত পরিচয়—এক দিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, অন্য দিকে দক্ষ স্থপতি—আজকের তরুণদের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম।
বরুণ চক্রবর্তীর এই প্যাশনের ভারসাম্য আমাদের শেখায়—জীবনে একাধিক ভালোবাসা থাকতেই পারে। তবে আসল জিনিস হলো সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলা এবং নিজের শিকড়কে মনে রাখা। মাঠে যেমন বরুণ নিখুঁত, তেমনি মাঠের বাইরেও নিজের কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
স্ট্রেস কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে মাসাজ, তবে সাবধানে নিতে হবে এই সিদ্ধান্ত