আইনের দরবারে বিতর্কের ঝড়!
ইলাহাবাদ হাই কোর্ট চত্বরে এবার নীরবতা নয়, প্রতিবাদের সুর। বিচারপতি যশবন্ত বর্মার আকস্মিক বদলির নির্দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন সেখানকার আইনজীবীরা। দিল্লি হাই কোর্ট থেকে তাঁকে ইলাহাবাদে স্থানান্তর করার প্রতিবাদে তাঁরা ডাক দিয়েছেন অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির।
বদলির নেপথ্যে কী?
হোলির উৎসবের দিন বিচারপতি বর্মার সরকারি বাসভবনে আগুন লাগে। অভিযোগ, সেই আগুন নেভানোর সময় দমকলকর্মীরা প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ উদ্ধার করেন। নগদের সঠিক পরিমাণ এখনও অজানা। এই ঘটনার রেশ না কাটতেই প্রকাশ্যে আসে বিচারপতির বদলির খবর। যদিও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বদলির সিদ্ধান্তের সঙ্গে নগদ উদ্ধারের ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।
আইনজীবীদের ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ
ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অনিল তিওয়ারির কণ্ঠে ক্ষোভের ঝাঁজ স্পষ্ট। তিনি বলেন,
“বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিচারপতি বর্মার দিল্লিতেই থাকা উচিত। কোনও আদালত আবর্জনার স্তূপ নয়, যেখানে দোষারোপের কালো ছায়ায় ঢাকা একজন বিচারপতিকে পাঠানো হবে।”
তিনি আরও দাবি করেছেন, জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিচারপতি বর্মার দেওয়া সমস্ত রায়ের পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি, ‘নগদকাণ্ডে’ নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সিবিআই বা ইডির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম বিচারপতি বর্মার বদলির সুপারিশ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠায়। সরকার অনুমোদন দিলেই বদলির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
যদিও শীর্ষ আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বিচারপতির বাসভবনে নগদ উদ্ধারের অভিযোগ এবং তাঁর বদলির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনা। আদালতের বক্তব্য, বদলির প্রস্তাবটি এসেছিল ২০ ও ২৪ মার্চের কলেজিয়াম বৈঠকে, যা আগুন লাগার ঘটনার আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল।
নগদকাণ্ডে তদন্তের দাবি
আইনজীবীরা শুধু বদলির প্রতিবাদেই থেমে থাকেননি। তাঁরা বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিও তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি।
আইনজীবী মহলের মতে, যদি বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, তবে এ ধরনের বদলি বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও আস্থার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এখন কী হতে পারে?
কেন্দ্রীয় সরকার যদি সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ মেনে নেয়, তবে বিচারপতি বর্মার বদলি কার্যকর হবে। অন্যদিকে, আইনজীবীদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
আইনের এই অশান্ত তরঙ্গে এখন সবার চোখ সুপ্রিম কোর্ট এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। বিচারপতি বর্মার ভাগ্য এবং ইলাহাবাদ হাই কোর্টের আইনজীবীদের আন্দোলনের পরিণতি নির্ধারণ করবে আগামী কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহ।