Friday, February 7, 2025

‘আইআইটি বাবা’: সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে এক যুবা ইঞ্জিনিয়ারের যাত্রা

Share

আইআইটি বাবা

মহাকুম্ভ মেলায় ভিড় জমেছে লক্ষ লক্ষ মানুষের। গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর পবিত্র সঙ্গমস্থলে পূণ্যস্নানের উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছেন ভক্তেরা। কিন্তু এই বিশাল ভিড়ে এক যুবক সাধু সবার নজর কেড়েছেন। তাঁর নাম ‘আইআইটি বাবা’। কৌতূহল জাগে, কেন একজন আইআইটি-তে পড়া প্রতিভাবান যুবক সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথ বেছে নিলেন?

কে এই ‘আইআইটি বাবা’?

‘আইআইটি বাবা’র আসল নাম অভয় সিংহ। হরিয়ানার বাসিন্দা অভয় পড়াশোনা করেছেন ভারতের অন্যতম সেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, আইআইটি বোম্বে থেকে। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি ডিজাইনিং নিয়ে স্নাতকোত্তর করেন। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি একাধিক পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন—ছবি তোলা, পদার্থবিদ্যার প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা।

তবে অভয়ের জীবনে পরিবর্তনের সূচনা হয় যখন তিনি অনুভব করেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তাঁকে জীবনের গভীর অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারছে না। তখনই তিনি আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝোঁকেন এবং ঈশ্বরের সন্ধানে দীক্ষা গ্রহণ করে সাধু হয়ে ওঠেন।

আইআইটি বাবা

কেন আধ্যাত্মিকতার পথ বেছে নিলেন?

‘আইআইটি বাবা’ জানিয়েছেন যে, জীবনের প্রকৃত অর্থ বোঝার জন্য তিনি সক্রেটিস, প্লেটো এবং উত্তর-আধুনিকতাবাদ নিয়ে গভীর অধ্যয়ন করেছেন। তবে এই অধ্যয়ন তাঁকে এক জায়গায় এনে দাঁড় করায়—জীবনের প্রকৃত সুখ এবং শান্তি অর্জন করা সম্ভব শুধুমাত্র আধ্যাত্মিকতার মধ্য দিয়ে।

তাঁর কথায়, “আমি এখন যা আহরণ করছি, সেটাই আসল জ্ঞান। আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে মানুষ তার মন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গভীরতা অনুভব করতে পারে।”

অভয়ের মতে, প্রতিযোগিতামূলক জীবনের চাপে মানুষের সত্যিকারের সুখ হারিয়ে যায়। তাঁর দীক্ষার পর নতুন নামকরণ হয় ‘মাসানি গোরখ’। এখন তিনি শিবের উদ্দেশ্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

মহাকুম্ভে ‘আইআইটি বাবা’র উপস্থিতি

মহাকুম্ভ মেলায় সাধু-সন্ন্যাসীদের মাঝে ‘আইআইটি বাবা’র উপস্থিতি ভক্তদের মধ্যে আলাদা কৌতূহল তৈরি করেছে। সিএনএন-নিউজ় ১৮-এর সাংবাদিকের সঙ্গে কথোপকথনের সময় দেখা যায়, সদাহাস্য এবং শান্ত স্বভাবের এই যুবা সাধু। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা এবং সরল জীবনযাপন অনেকের হৃদয় জয় করেছে।

সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এই পর্যায়টিই জীবনের সেরা পর্যায়। এখানে প্রতিটি মুহূর্তই নতুন কিছু শেখার এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেয়। ভবিষ্যতের চিন্তা আমাকে আর বিচলিত করে না।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আইআইটি বাবা’কে নিয়ে আলোচনা

‘আইআইটি বাবা’র গল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। তাঁর কথা শুনে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন। একজন নেটাগরিক লিখেছেন, “সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের জ্ঞান অর্জন করার পরেও শূন্যতা থেকে যায়। শিব চিরন্তন সত্য। ‘আইআইটি বাবা’ এর জীবন্ত উদাহরণ।”

তবে সমালোচনাও হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, “আইআইটি-তে পড়ার সুযোগ অনেকেই স্বপ্ন দেখে। এমন একটি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত বোঝা কঠিন।”

‘আইআইটি বাবা’র জীবন আমাদের কী শেখায়?

‘আইআইটি বাবা’র জীবন কেবল একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক যাত্রার গল্প নয়, এটি আমাদের জীবনের মূল্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। প্রতিযোগিতামূলক জীবনে শীর্ষে পৌঁছেও শান্তি খুঁজে না পেয়ে, আধ্যাত্মিকতার মধ্য দিয়ে তিনি যে প্রশান্তি পেয়েছেন, তা অনেকের কাছে প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।

তাঁর কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবনের সাফল্য শুধু পেশাগত উৎকর্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃত সুখ এবং শান্তি খুঁজে পাওয়া সম্ভব নিজের অন্তরের গভীরে।

সত্যিকারের সাধ্বী নাকি শুধুই লোকদেখানো! নেটপ্রভাবী হর্ষা রিচারিয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

Read more

Local News