২৫০ কোটি টাকার প্রতারণার
উত্তরপ্রদেশে একটি প্রতারণা চক্রের খোঁজে সওয়া কোটি টাকার তদন্ত করতে গিয়ে বিধাননগর সিটি পুলিশ এবং রাজ্য সাইবার শাখার গোয়েন্দারা এক বিশাল আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণার জাল আবিষ্কার করেছে। এই চক্রটি ভারতের ২৯টি রাজ্যে ছড়িয়ে এবং বিভিন্ন দেশে সংযোগ রেখে আড়াই হাজারেরও বেশি ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ২৫০ কোটি টাকার প্রতারণা চালিয়েছে।
১৭ জন গ্রেফতার, তিন পান্ডার নাম প্রকাশ
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন প্রধান পান্ডা, অভিষেক বনসল, মায়াঙ্ক চৌধুরী, এবং অমিত জিন্দলের নাম সামনে এসেছে। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অভিষেক শিলিগুড়ির বাসিন্দা এবং চক্রের মাথা হিসেবে পরিচিত। মায়াঙ্কের বাড়ি গুজরাতে এবং অমিত ফরিদাবাদ থেকে। তারা বর্তমানে দুবাইয়ে বসবাস করে চক্রটি পরিচালনা করছিল।
ধৃতদের মধ্যে দু’জন মজফ্ফরপুর থেকে, সাত জন কলকাতার একটি হোটেল থেকে, এবং ছ’জন দক্ষিণ কলকাতার একটি অফিস থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশের দাবি, এই চক্রটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালিত, এবং এর সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ একাধিক দেশের যোগাযোগ রয়েছে।
প্রতারণার পদ্ধতি
এই প্রতারণার প্রধান হাতিয়ার ছিল ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, যা “মিউল অ্যাকাউন্ট” নামে পরিচিত। এসব অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়া হতো বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে। অভিযুক্তরা ভুয়ো নথি ব্যবহার করে এই অ্যাকাউন্ট খুলত। এছাড়া মোবাইল সিম কার্ড সংগ্রহ করে সেগুলি দুবাইয়ে পাঠানো হতো। সেখান থেকে প্রতারকরা হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতারণার কাজ চালাত।
২৯টি রাজ্যে ছড়ানো প্রতারণার জাল
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের দাবি অনুযায়ী, ভারতের ২৯টি রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এই চক্রের জাল। প্রায় আড়াই হাজার অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৭০০টির বেশি ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, এই প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে দেড় হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে।
সাইবার প্রতারণার একটি উদাহরণ
এই প্রতারণার একটি বিশেষ উদাহরণ হলো সল্টলেকের এক চিকিৎসকের অভিযোগ। গত জুন মাসে, তিনি শেয়ার সংক্রান্ত আলোচনার জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দেন। তাকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং আশ্বাস দেওয়া হয় যে তিনি কয়েক গুণ বেশি টাকা ফেরত পাবেন। চিকিৎসক প্রায় সওয়া কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন, যা পরে আর ফেরত পাননি। তদন্তে জানা যায়, এসব অ্যাকাউন্ট ছিল সম্পূর্ণ ভুয়ো।
ব্যাঙ্ক ও মোবাইল সংস্থার যোগসাজশ
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশ এবং মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার যোগসাজশ ছিল এই প্রতারণার সঙ্গে। ইতিমধ্যেই নাগেরবাজারের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এছাড়া, ভুয়ো নথি জমা দিয়ে বিপুল সংখ্যক “প্রি-অ্যাক্টিভেটেড” সিম কার্ড তৈরি এবং সরবরাহ করা হয়েছিল, যা পরে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।