সরকারকে চিঠি লিখে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযান স্থগিতের আবেদন মাওবাদী নেতৃত্বের!
মাওবাদী দমনে কেন্দ্র যখন ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত সাফল্যের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে, তখনই বিস্ময়কর ভাবে সরকারের কাছে সময় চাইলেন মাওবাদী নেতৃত্ব। আত্মসমর্পণের পথ আরও সহজ করতে আপাতত তিন রাজ্যে চলমান যৌথ অভিযান স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছে মাওবাদীদের মহারাষ্ট্র–মধ্যপ্রদেশ–ছত্তীসগঢ় (এমএমসি) স্পেশ্যাল জ়োনাল কমিটি।
চিঠিতে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযান বন্ধ রাখলে আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া গতিময় করা সম্ভব হবে। এই সময়ের মধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন শাখার সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ চান তাঁরা।
🔶 হিডমা নিহত হওয়ার ঠিক পরেই সময় চাইলেন মাওবাদী নেতৃত্ব
গত সপ্তাহেই অন্ধ্রপ্রদেশে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে নিহত হন মাওবাদীদের ভয়ঙ্কর ও কুখ্যাত শীর্ষনেতা মাডবী হিডমা, যাঁর মাথার দাম কোটি টাকারও বেশি ছিল। তাঁর মৃত্যুর মাত্র তিন দিন পরেই, ২২ নভেম্বর তারিখে মাওবাদী নেতৃত্ব এই চিঠি লেখেন।
চিঠিতে সই রয়েছে এমএমসি কমিটির মুখপাত্র অনন্তের।
গত কয়েক মাসে ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা–সহ একাধিক মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় আত্মসমর্পণের ঢল দেখা যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে গত মাসেই হায়দরাবাদে ধরা পড়েন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পুল্লুরি প্রসাদ রাও।
এই প্রেক্ষিতেই আত্মসমর্পণকে আরও সংগঠিত করতে সময় চাইছে মাওবাদীরা।
🔶 কী লেখা রয়েছে মাওবাদীদের চিঠিতে?
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস (মহারাষ্ট্র), বিষ্ণুদেও সাই (ছত্তীসগঢ়) এবং মোহন যাদব (মধ্যপ্রদেশ)-এর উদ্দেশে অনন্ত লিখেছেন—
- মাওবাদীদের অনেকেই অস্ত্রসমর্পণ করে সরকারি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে ইচ্ছুক।
- কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সংগঠনের প্রতিটি শাখার সঙ্গে আলোচনা জরুরি।
- “গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা” অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে। তাই ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযান বন্ধ রাখা হোক।
অনন্ত দাবি করেছেন, তাঁদের এই আবেদন কোনও গোপন উদ্দেশ্যে নয়।
বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে তাঁরা ঘোষণা করেছেন—
২ ডিসেম্বর মাওবাদীরা ‘পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি’ সপ্তাহ পালন করবে না।
এটি সাধারণত তাঁদের সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক অনুষ্ঠানের দিন।
🔶 কেন্দ্রের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই দাবি— বলছে মাওবাদীরা
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বহুবার বলেছেন—
২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যেই মাওবাদমুক্ত হবে দেশ।
মাওবাদী নেতৃত্ব এই সময়সীমার কথাই উল্লেখ করে লিখেছেন—
“আমরা যে সময় চাইছি, তা কেন্দ্র সরকারের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই পড়ছে। তাই এই সময়টুকু সরকার দিলে আত্মসমর্পণের ঢল আরও বাড়বে।”
তাঁদের বক্তব্য— অভিযানে বিরতি দিলে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা কমবে এবং অনেকে প্রাণ বাঁচাতে অস্ত্র নামাতে উৎসাহ পাবেন।
🔶 হঠাৎ এই আবেদন— নেপথ্যে কী?
বিশ্লেষকদের মতে এর পিছনে থাকতে পারে—
✔ ক্রমাগত শীর্ষ নেতৃত্বে ক্ষয়
হিডমার মতো নেতার মৃত্যু মাওবাদীদের ভিত কাঁপিয়েছে।
✔ বাড়ছে আত্মসমর্পণ
যৌথ বাহিনীর চাপে একের পর এক মাওবাদী আত্মসমর্পণ করছেন। সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ছে।
✔ গ্রাউন্ড সাপোর্ট কমে যাওয়া
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে জঙ্গল এলাকার মানুষের সমর্থন আগের তুলনায় কমেছে।
✔ সময় টানার কৌশল?
সরকারি মহলের মতে, এটি হয়তো সময় নেওয়া বা পুনর্গঠনের কৌশল হতে পারে। তাই চিঠিকে সন্দেহের চোখেও দেখছেন অনেকে।
🔶 সামনে কী?
সরকার এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠির বিষয়ে কিছু জানায়নি।
তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে—
“অভিযান থামানো যে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, সেটাই বড় প্রশ্ন।”
মাওবাদীদের সত্যিই আত্মসমর্পণের জন্য সময় দরকার, নাকি এটি কৌশলগত দাবি—
তা জানতে সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পরিস্থিতি অনুযায়ী আগামী কয়েক সপ্তাহে বোঝা যাবে—
এটি কি সত্যিই শান্তির ডাক, নাকি মাওবাদী আন্দোলনের পুনর্গঠনের আর এক চেষ্টা।

