অশান্ত শমসেরগঞ্জ-সুতি!
মুর্শিদাবাদের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝেই শমসেরগঞ্জ ও সুতি থানার দুই ওসিকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য পুলিশ। নয়া ওয়াকফ আইন বিরোধী আন্দোলনের জেরে যেভাবে অশান্তি ছড়িয়েছিল এলাকায়, তাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভবানী ভবনের এই রদবদলকে কেউ দেখছেন কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে, আবার কেউ বলছেন, এটা গোয়েন্দা ব্যর্থতার পরিণতি।
গত সপ্তাহেই ওয়াকফ আইনের সংশোধনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মুর্শিদাবাদের কয়েকটি থানা এলাকা। শমসেরগঞ্জ, সুতি এবং ধুলিয়ানে ঘটে যায় একাধিক হিংসার ঘটনা। প্রাণ হারান তিন জন। অভিযোগ, পুলিশের সামনে দাঁড়িয়েই ঘটেছে এই ঘটনা। অথচ তারা নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভে ফুঁসছিল স্থানীয়রা, কেউ কেউ ঘরছাড়া পর্যন্ত হয়েছেন।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার ভবানী ভবন থেকে একটি নির্দেশ আসে—শমসেরগঞ্জ থানার দায়িত্বে বসানো হচ্ছে ইন্সপেক্টর সুব্রত ঘোষকে, যিনি পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরের সার্কল ইনস্পেক্টর ছিলেন। অপরদিকে, সুতি থানার দায়িত্বে এলেন ইন্সপেক্টর সুপ্রিয়রঞ্জন মাজি, যিনি পূর্ব বর্ধমানের সদর ট্র্যাফিক গার্ডে ছিলেন।
এত দিন এই দুই থানার ওসি পদে ছিলেন শিবপ্রসাদ ঘোষ ও বিজন রায়, যাঁরা সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার। তাঁদের দু’জনকেই পাঠানো হয়েছে জেলা পুলিশের লাইন পোস্টিংয়ে।
পুলিশ মহলের একাংশ মনে করছেন, এই বদলি সরাসরি ‘শাস্তিমূলক’ না হলেও, পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘কড়া বার্তা’ হিসেবেই ধরা যেতে পারে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে এখনো পর্যন্ত সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার মতে, “এই বদলি আদতে থানাগুলিকে আইসি পরিচালিত ইউনিটে রূপান্তরের অংশ। সাব-ইন্সপেক্টর দিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ থানা চালানো কঠিন ছিল। তাই পদমর্যাদায় উন্নত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হল।”
তবে এই ব্যাখায় অনেকেই পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। পুলিশের অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্ন—গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতার জেরেই কি এই পদক্ষেপ? ইতিমধ্যেই গঠিত হয়েছে রাজ্য সরকারের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)। সেখানে আলোচনা হয়েছে গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে। রাজ্যের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকারও জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধার করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ক্ষোভ জমে আছে মূলত নিচুতলার অফিসারদের প্রতি। তাই দায়িত্বে পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রশাসন চাইছে সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে। তবে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে—এই রদবদলে কি শান্তি ফিরবে, নাকি অস্থিরতা চলতেই থাকবে?
একদিকে দাগ উঠছে গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগে, অন্যদিকে দায়িত্বে আসছেন উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। সময়ই বলবে, এই রদবদল আসলেই কতটা কার্যকর প্রমাণিত হবে।
জয়ী সিংহ ফতেহ্সিন! ৮ বছরের অপেক্ষার পর বাবা হলেন জাহির খান, খুশির হাওয়া লখনউ শিবিরে

